হার্টবিট ডেস্ক
বাংলাদেশি চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ, আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে পরিচয় ও চিকিৎসা শিক্ষার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার প্রত্যয়ে নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে প্রবাসী চিকিৎসকদের সংগঠন প্ল্যানেটারি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া (পিএইচএ)। দেশীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসকদের ফেলোশিপও দেবে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা। একইসঙ্গে এমন আয়োজনের মাধ্যমে দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা চিকিৎসকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, প্ল্যানেটারি হেলথ অ্যাকাডেমিয়া বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগ যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে লক্ষ্যে উভয়পক্ষ থেকে দেওয়া-নেওয়া থাকতে হবে। তা না হলে একটি প্রজন্মের পর তা টিকবে না। আমি মনে করি, বাংলাদেশ থেকেও তাদের সহযোগিতা করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ডায়াবেটিসের একটা কারণ নিয়ে কাজ করেছি। যিনি এখানে কাজ করেছেন তিনি হার্ভার্ডে কাজ করেন। এটি দুই পক্ষের কম্বিনেশনের মাধ্যমে হয়েছে। আমাদের ক্লিনিক্যাল সেটিং আছে। আমারা যৌথভাবে অনেক কাজ করতে পারি।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমোদের বাংলাদেশি চিকিৎসকরা আছেন। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের জ্ঞান ভাগাভাগি করলে আমাদের চিকিৎসকরা আরও প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা অনেক মেধাবী। যদি নলেজ শেয়ার হয় তাহলে আমাদের টেকনোলজিক্যাল নলেজ ভালো একটা পর্যায়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের ক্লিনিক্যাল টেস্ট করার মতো আরও ফ্যাসিলিটিস দরকার। একটা রেগুলেটরি সিস্টেম দরকার যারা এটা বুঝবে এবং অনুমোদন দেবে। এই ইকোসিস্টেম এতদিন ছিল না। কিন্তু করোনাকালে তা গড়ে উঠেছে। অনেক গাইডলাইন হয়েছে। এগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে।
প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়ার চেয়ারপারসন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি আর্নেট হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসবিরুল ইসলাম বলেন, পিএইচএ প্ল্যাটফর্মে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ এবং গবেষকদের যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তরুণ চিকিৎসক- স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিতের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে পিএইচএ গঠিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পিএইচএ সারা বিশ্ব থেকে ১৫০টিরও বেশি ফ্যাকাল্টি সদস্য নিয়ে ২০০টিরও বেশি সেশন করেছে। আর এসব সেশনে অংশ নেওয়া প্রত্যেকেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্মানিত। এই ২০০টিরও বেশি সেশনে পিএইচএ ২০টিরও বেশি সাব-স্পেশালিটি, স্বাস্থ্য বাজেটিং, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ মহামারি এবং চিকিৎসা শিক্ষা সম্পর্কিত ওয়েবিনার কভার করেছে।
প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়ার ট্রাস্টি ডা. বিএম আতিকুজ্জামান বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে এতদিন অনেক কিছু নিয়েছি, এবার আমরা মনে করি দেশকে আমাদের কিছু দেওয়ার আছে। সেই চিন্তা করেই আমাদের পিএইচএর যাত্রা শুরু। আমরা বাংলাদেশি তরুণ চিকিৎসকদের জন্য আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিচ্ছি। তরুণ ছাত্ররা আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবেন।
তিনি বলেন, আমাদের ফেলোশিপটা হবে ট্রাভেলিং ফেলোশিপ। যা সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘ হবে। প্রথম বছরে আমরা ৬ থেকে ৮ জনকে ফেলোশিপ দেব, যার পুরোটা স্পন্সর পিএইচএ করবে।
উল্লেখ্য, পিএইচএ প্ল্যাটফর্মে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ এবং গবেষকদের যুক্ত করতে এবং বিশ্বব্যাপী তরুণ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের আরও উন্নত শিক্ষা দেওয়ার একটি বিশ্বমানের পদ্ধতি তৈরি করার আশা নিয়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে পিএইচএ গঠিত হয়েছিল। তারপর থেকে, সংগঠনটি দুই শতাধিক সেশন আয়োজন করেছে এবং সারা বিশ্ব থেকে একশত ৫০ টিরও বেশি ফ্যাকাল্টি সদস্য নিয়োগ করেছে।
Discussion about this post