হারাধন দেবনাথ
অনেক সময় শিশুর মস্তিষ্কে তরল জমে। এ কারণে শিশুর মাথার আকার স্বাভাবিকের তুলনায় বড় দেখাতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ সমস্যাকে বলা হয় হাইড্রোকেফালাস। সহজ ভাষায়, বড় মাথার শিশু। সচেতন হলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
যে কারণে হয়
মানবদেহের মস্তিষ্কে ভেন্ট্রিকল নামের খালি জায়গায় একধরনের তরল সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড তৈরি হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরে এ তরল রক্তে শোধিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ মিলিলিটার তরল তৈরি হয়। রক্তে শোধিত হওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে ১৫০ মিলিলিটার। কোনো কারণে তরল নির্গমনের পথে বিঘ্ন তৈরি হলে পুরো প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়। তরল সঠিকভাবে বেরোতে না পেরে মস্তিষ্কের ভেতর জমে যায়। এটাই শিশুর হাইড্রোকেফালাসের প্রধান কারণ। জন্মগতভাবে তরল নির্গমন পথে সমস্যা, টিউমার, মেনিনজাইটিস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানা কারণে এ রোগ হতে পারে।
শনাক্তের উপায়
জন্মের পর হাইড্রোকেফালাসে আক্রান্ত শিশুর মাথা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হতে থাকে। শিশু সব সময় খিটখিটে আচরণ করে। মাথাব্যথা ও বমি হয়। চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে আসে। এ ছাড়া শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। খিঁচুনি হতে পারে। হাঁটাচলার সময় শিশু ভারসাম্য হারাতে পারে।
যা করতে হবে
হাইড্রোকেফালাস সন্দেহ হলে সিটি স্ক্যান করে রোগ শনাক্ত করা যায়। এরপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া মায়ের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি, রক্তের সম্পর্কের কাউকে বিবাহ করা, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের খিঁচুনির ওষুধ খাওয়াসহ আরও কিছু কারণে শিশু জন্মগতভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই শিশুর জন্মগত ত্রুটি এড়াতে সন্তান নিতে ইচ্ছুক ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সচেতন হতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করলে, গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে ও গর্ভাবস্থায় মাকে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। সবুজ শাক–সবজি, গাজর, মটরশুঁটি, পেঁপে, কমলা, আঙুর ও স্ট্রবেরিতে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে।
বাংলাদেশে রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিবাহের প্রথা এখনো অনেক বেশি। এ কাজে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এর মাধ্যমে হাইড্রোকেফালাসসহ শিশুর অনেক জন্মগত ত্রুটি কমানো সম্ভব। গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীকে আগে থেকে দীর্ঘমেয়াদি রোগের (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এপিলেপসি) ওষুধ খেতে হলে তা চিকিৎসককে জানাতে হবে।
হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post