হার্টবিট ডেস্ক
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত টেলিভিশন শো ‘স্বর্ণ শেফ।’ সারা বাংলাদেশের উদীয়মান তরুণ শেফরা তাদের রান্নার দক্ষতা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাজির হচ্ছে অনুষ্ঠানটিতে। কিশোর-কিশোরী ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করাই আয়োজনটির মূল লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিসেস-এর লাইন ডিরেক্টর ড. এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে পুষ্টির মাত্রা বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের দেশের প্রথম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। বাংলাদেশ সরকার তখন থেকেই সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা প্রশংসনীয় যে, পুষ্টি বিষয়ে সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি ইউনিসেফের মতো উন্নয়ন সহযোগীরা কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে শেখাচ্ছে এবং অল্প বয়সেই তাদের শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, পুষ্টিকর খাবার রান্না করাও শেখাচ্ছে।’
ভালো পুষ্টির গুরুত্ব গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে শুরু হয় এবং শৈশব ও কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তির সার্বিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
শাকসবজি, ফলমূল এবং ডিম, মাছ, মাংস ও ডালের মতো আমিষ সমৃদ্ধ খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এর অভাবে একজন শিশু বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির শিকার হতে পারে, যেখানে অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতার মাঝেও অপুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি থেকে যায়। অপুষ্টির কারণে একটি শিশুর বিকাশ, স্কুলের প্রস্তুতি, শেখার কর্মক্ষমতা এবং জীবনের সুযোগগুলো বাধাগ্রস্ত হতে পারে
অপুষ্টির কারণে বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য আজ বহুমুখী ঝুঁকিতে। ২৮ শতাংশ শিশু দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থুলতা বাড়ছে। ৫৬ শতাংশ কিশোরী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।
বাংলাদেশে ২৮ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১০ শতাংশ শিশু কৃষকায়, যা উদ্বেগজনক। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং সংক্রমণের শিকার হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে। তারা প্রায়ই মনোযোগ ও একাগ্রতা নিয়ে সমস্যায় ভোগে, যা তাদের জন্য পড়াশোনাকে কঠিন করে তোলে। এমনকি তারা স্কুল থেকেও ঝরে পড়তে পারে।
তবে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। এটি প্রারম্ভিক শৈশবে দুর্বল বৃদ্ধিজনিত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে, আজীবন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ভিত্তি তৈরি করতে এবং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে অপুষ্টির চক্র ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, ‘স্বর্ণ শেফ-এর লক্ষ্য হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে রান্নার মজা ও খাওয়ার আনন্দ ছড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে সহায়তা করা।’
স্বর্ণ শেফ অনুষ্ঠানে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর শেফদের তুলে ধরা হয়, যারা প্রতি সপ্তাহে একটি ভিন্ন রান্নার চ্যালেঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রতিটি পর্বের শেষে বিচারকদের একটি প্যানেল তাদের খাবারের পুষ্টির মান এবং স্বাদ উভয় দিক মূল্যায়ন করে, যে প্যানেলে একজন পেশাদার শেফ এবং একজন পুষ্টিবিদ থাকেন।
ইউনিসেফ বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স এবং পিসিআই মিডিয়ার মধ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মিত রান্নার এই অনুষ্ঠানটি ৬০ লাখ দর্শকের কাছে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানটি স্বাস্থ্যকর রান্নার জ্বালানি যেমন জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে বিদ্যুৎ বা রান্নার গ্যাস ব্যবহারকেও উৎসাহিত করে। বাড়িতে রান্নার ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা একটি গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত উদ্বেগ, বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য।
‘স্বর্ণ শেফ’ প্রতি শুক্রবার রাত ৮:৩০ মিনিটে এবং শনিবার দুপুর ১টায় দুরন্ত টিভিতে প্রচারিত হয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রতি শনিবার রাত ৮টায় তার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে একটি নতুন পর্ব সম্প্রচার করে।
Discussion about this post