হার্টবিট ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেই। এ প্রেক্ষাপটে নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষণা শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
গবেষণায় নিপাহ সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে গবেষণাটি প্রয়োজনীয় কিছু টুলস তৈরিতে সাহায্য করবে, যা ভবিষ্যতে সেপি অনুমোদিত এবং অন্যান্য নিপাহ ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও পর্যালোচনার সহায়ক হবে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই গবেষণায় অর্থায়ন করবে দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সেপি)।
আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে ধাপে ধাপে গবেষণা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির মাত্রাও যাচাই করা হয়ে থাকে। সেই অ্যান্টিবডি পরিমাপের জন্য একটি মাত্রা থাকে, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণায় সেই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে দেশে নিপাহ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ৫০ জনেরও বেশি রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বায়োলজিক্যাল উপাদানগুলো নিপাহ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে সাহায্য করবে। এসব তথ্য ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হতে যাওয়া নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার টুলস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানদণ্ড উন্নয়নে সহায়ক হবে।
আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ভ্যাকসিন গবেষণায় আমাদের অভিজ্ঞতা পাঁচ দশকেরও বেশি। কলেরা, টাইফয়েড, রোটাভাইরাস, হাম, পোলিও, নিউমোনিয়া ডেঙ্গু, এইচপিভিসহ অনেক ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ও লাইসেন্স অর্জনে আইসিডিডিআর,বি বিশেষ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমরা প্রাণী থেকে মানুষে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায় শনাক্তকরণ, রোগের কারণ-অনুসন্ধান সংক্রমণ গতিশীলতা, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্বের দীর্ঘতম নিপাহ ভাইরাস সার্ভিল্যান্স পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন জ্ঞান ও প্রমাণ সংগ্রহের এই মহান উদ্যোগের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, যা সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামারি অবস্থা তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন নিপাহ রোগের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাবে।
এতে বলা হয়েছে, ৫০ জনেরও অধিক নিপাহ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করবেন। যার লক্ষ্য হচ্ছে পূর্ববর্তী নিপাহ প্রাদুর্ভাবের কারণে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চিহ্নিত করা এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে তার পরিবর্তন হয় তা জানার চেষ্টা করা। এই নতুন তথ্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনের জন্য টুলস তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করবে। এ গবেষণাটি বাংলাদেশে পরিচালিত হবে, যেখানে প্রায় প্রতি বছরই নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।
আরও বলা হয়, এই গবেষণাটি পরিচালনার জন্য সেপি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার সহায়তা প্রদান করবে। সেপি ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ায় ইউনিভার্সিটি অফ মালয়ার সঙ্গে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়ে অনুরূপ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আইসিডিডিআর’বির এ গবেষণা নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাকে বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ক তথ্য উপাত্ত নথিভুক্ত করবে এবং মালয়েশিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিপাহ স্ট্রেইনের সঙ্গে তুলনা করা হবে।
Discussion about this post