হার্টবিট ডেস্ক
যশোরে ক্রমেই অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও হাসপাতালমুখী করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে কাজ চলছে।জেলায় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে (এনসিডি-নন কমিউনিকেবল ডিজিজ) গত তিন বছরে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ৯২৬ জনকে শনাক্ত ও সরকারি হাসপাতলে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের ৪২ শতাংশেরই বয়স ৪৫-৫৪ বছর।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) যশোরের একটি হোটেলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক আয়োজিত সেমিনার এ তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে নয়, জীবন যাত্রা পরিবর্তন করে অসংক্রামক রোগ থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। এ কার্যক্রমে সরকারি কর্মকর্তাদের তদারকি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি ভাবে সবাইকে এটা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে তবেই কার্যক্রম সফল হবে। যশোরের বিভিন্ন হাসপাতালে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমের একটি পরিকল্পনা তৈরি হবে এবং গুণগত সেবা দেওয়া নিশ্চিত হবে।
সেমিনারে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ প্রকল্পের (এনডিসি প্রকল্প) টিম লিডার তরুণ কান্তি হোড় জানান, তিন বছর মেয়াদী ‘প্রজেক্ট অন স্ট্রেন দেনিং কাউন্সেলিং কর্নার ফর রিডিউসিং রিস্ক টু নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ইন যশোর ডিস্ট্রিক্ট’ প্রকল্পের আওতায় চৌগাছা, মণিরামপুর, কেশবপুর, সদর উপজেলা এবং অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ৩৬ হাজার ৯২৬জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২ লাখ ৩৬ হাজার জনকে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে করণীয় ও চিকিৎসা সংক্রান্তে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। জেলায় অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই ৪৫-৫৪ বছর বয়সী। এই সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৮৫ জন। যা মোট শনাক্ত রোগীর ৪২ শতাংশ। এছাড়া ১৮-২৪ বছর বয়সী এক শতাংশ, ২৫-৩৪ বছর বয়সী ৬ শতাংশ, ৩৫-৪৪ বছর বয়সী ২৩ শতাংশ, ৫৫-৬৪ বছর বয়সী ১৮ শতাংশ, ৬৫ উর্ধ্ব বয়সীদের ১১ শতাংশ অসংক্রমক রোগে আক্রান্ত।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, জেলা মোট শনাক্ত রোগীর মধ্যে ডায়বেটিসে আক্রান্ত ১৪ হাজার ১৭৮জন রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ১১ হাজার ৯৬৭জন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪০৪ জন। বাকিরা স্ট্রোক, হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগী শনাক্ত, ডাটাবেজ তৈরি ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রকল্পটি সাড়া ফেলেছে। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুরু হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চে শেষ হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবীর। আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনডিসি প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালক মো. মনজুরুল মোর্শেদ, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান।
অসংক্রামক রোগ মডেল ব্যবস্থাপনা (এনসিডি ম্যানেজমেন্ট মডেল) সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন স্বাস্থ্য বিভাগের এসিডিসি গ্রোগ্রামের কর্মকর্তা ডা. সরোয়ার উদ্দীন মিলন। আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, কোভিডের ধকলে মানুষ ভুগছেন। এর সঙ্গে অসংক্রামক রোগের বিস্তার আছে। সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যবিভাগের আয় বাড়াতে হবে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বশত সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সেটি করতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগের বাজেট বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের জন্য প্রটোকল ও গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। প্রটোকল ও গাইড লাইন না থাকায় অনেক চিকিৎসক আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রেসক্রিপশনে অনেক ওষুধ লেখেন। রোগী ওষুধ কিনতে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য গাইডলাইন ও প্রটোকল দরকার।সাধারণ রোগের জন্য মানুষ ঢাকায় যায়। সেখানে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। ভারতে গিয়ে বেশি প্রতারিত হচ্ছে। রোগীর ট্রাফিকিং রোধ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে ও রোগ নির্ণয়ে জোর দিতে হবে।
Discussion about this post