ডা: হারুনুর রশীদ, এমডি ( কিডনী রোগ)
প্রতিনিয়ত চেম্বারে রোগীরা তাদের প্রশ্রাব যখন লাল রঙের বলে তখন আমি বিচলিত হই না। কারণ তাদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রে রঙ আসলে হলদে, কমলা কিংবা লালচে।
কেন এমন হয় জানেন?
আমি আগেই বলেছিলাম, বেশি ময়লাযুক্ত কাপড় কম পানি দিয়ে ধৌত করলে পানির রঙ বেশি ময়লাযুক্তই হবে।কাজেই এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলি যখন অল্প প্রশ্রাব দিয়ে যায় তখন এর ঘনত্ব বেড়ে রঙ পরিবর্তন হয়।
এমনটা হয় সকাল বেলার প্রশ্রাবে অথবা দীর্ঘ সময় চেপে রেখে প্রশ্রাব করলে।তবে ভ্যাপসা গরমে শরীর হতে বেশি ঘাম ঝরলে প্রশ্রাবের পরিমাণ কমেও এরকম হতে পারে ।জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর প্রশ্রাব হয় হলুদ কিংবা বাদামী রঙের।
তবে আপনি যদি Natural (যেমন বীটপালং বা লাল বীট) কিংবা Artificial colour মেশানো কোন খাবার খেয়ে থাকেন অথবা এমন কোন মেডিসিন (Rifampicin, Phenytoin, Nitrofurantoin etc) নিয়ে থাকেন যা কিডনি দিয়ে যাওয়ার সময় ভিন্ন রঙ ধারণ করে, তখনও এরকম ঘটতে পারে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির পর কয়েকদিন কিংবা মাসিক চলাকালীন সময়ে প্রশ্রাব লাল রঙের হতে পারে। কারণ এতে প্রশ্রাবের সঙ্গে প্রজননতন্ত্রের রক্ত মিশে যায়।এব্যাপারটা স্বাভাবিক বলে চিন্তার কারণ নেই।
মারামারি কিংবা অন্য কোন কারণে পেশী আঘাতপ্রাপ্ত হলে প্রশ্রাবের রঙ গোলাপি হয়।পেশীর মায়োগ্লোবিনই এর জন্য দায়ী।
এছাড়া কিডনি দিয়ে বেশি পরিমাণে রক্ত গেলে প্রশ্রাবের রঙ হয় কোকাকোলার মত।সাধারণত কিডনী রোগ AGN কিংবা Vasculitis রোগে এমনটা হয়।
রেচনতন্ত্রের অন্যান্য যে সকল রোগ প্রশ্রাবের রঙ লাল করতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনি বা প্রশ্রাবের থলির টিউমার, Renal TB, Urinary Bladder ইনফেকশন বা Cystitis, রেচনতন্ত্রের injury(External or internal by stone)। প্যাথলজিষ্টরা মাইক্রোস্কোপে দেখেই বুঝতে পারেন এই রক্তের উৎস কি কিডনি নাকি কিডনির নীচের অংশ। কারণ কিডনি দিয়ে যাওয়া RBC র shape অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
কাজেই লাল প্রশ্রাব নিয়ে সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় Test করে নিশ্চিন্ত হোন।
লেখক: কিডনী রোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
Discussion about this post