আব্দুল্লাহ আল মামুন
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার, সংক্ষেপে অটিজম; মস্তিস্কের বিকাশজনিত সমস্যার নাম। এ অসুখে ভুক্তভোগীরা সামাজিক আচরণ ও মানসিক যোগাযোগে অক্ষম হয়ে থাকেন। বিশ্বজুড়ে অটিজমে আক্রান্ত বা অটিস্টিক মানুষের সংখ্যা কম নয়। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্যমতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটিরও বেশি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা কম নয়।
অটিস্টিক চিলড্রেনস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, আমাদের দেশে ৯৪ জন ছেলে ও ১৫০ জন মেয়ের মধ্যে একজন করে অটিজমে আক্রান্ত। এই সংখ্যা হয়তো আরও বেশি। অটিজমের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন থেরাপির মাধ্যমে সাধারণত এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। ব্রিটেনের পেনিহুকস ফার্ম ট্রাস্ট বা পেনিহুকস প্রজেক্ট পরিচালিত পেনিহুকস ফার্মে অটিজমে আক্রান্ত তরুণদের চিকিৎসায় নেওয়া হয়েছে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। খামারে পশুপালন ও কৃষিকাজে অংশ নিয়ে এখানকার অটিস্টিক তরুণরা পরিচিত হচ্ছে নতুন এক জগতের সঙ্গে।
সমাজে পরিবারের সঙ্গে থেকেও একাকিত্ব আর একঘেয়েমির সঙ্গে কাটে যাদের জীবন, তারা এখানে এসে বিভিন্ন কৃষিকাজের মাধ্যমে নিজেকে আবিস্কার করছে নতুন করে, বদলে ফেলতে পারছে নিজেদের। পেনিহুকস ফার্মে মূলত চাষাবাদ, গরু-ভেড়া ও মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। এখানে কাজ করেন অটিজমে আক্রান্ত ২৪ বছরের যুবক ম্যাট বেলচার।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবন কাটত ঘরে আবদ্ধ থেকে, ভিডিও গেমস খেলে। আমি এক বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আমার দায়িত্ব ফার্মের কয়েকশ মুরগির লালনপালন করা।’
১৮ বছর বয়সী অ্যান্ডি মারে। কথা বলতে পারে না, আছে অটিজমের সমস্যা। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হলেও পশুদের দেখভাল এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগে কোনো সমস্যা হয় না তার। এমনটাই জানালেন এখানকার একজন শিক্ষক লিডিয়া ওটার। প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে বিশেষ শিশুদের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। লিডিয়া বলেন, ‘এই বিশেষ মানুষগুলো প্রকৃতি ও প্রাণীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে দারুণভাবে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, বিভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে। নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করছে। আমরা কয়েকজন আছি তাদের সাহায্য করতে।’
ব্রিটেনের অক্সফোর্ডশায়ার ও উইলটশায়ারের সীমান্তবর্তী গ্রামীণ প্রকৃতির মাঝে অটিজমের সমস্যায় ভোগা কিছু তরুণ কৃষিকাজে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে সমাজে নিজেদের অস্তিত্বের কথা জানান দিতে, এর চেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে।
Discussion about this post