হার্টবিট ডেস্ক
চট্টগ্রামে গতকালের বিশেষ গণটিকা ক্যাম্পেইনে দেখা গেছে গণজোয়ার। টিকা প্রত্যাশী মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল টিকা কেন্দ্রগুলোতে। মহানগরের পাশাপাশি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোতেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে মহানগরের ওয়ার্ড ও উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হয়।
গণটিকার আওতায় গতকাল একদিনে ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ মানুষ গতকাল টিকা নিয়েছেন। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৭ লাখ ৫৪ হাজার ২৯৪ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন গতকালের বিশেষ ক্যাম্পেইনে। এর মাঝে মহানগর এলাকায় ৩ লাখ ২৫ হাজার জন এবং উপজেলা পর্যায়ে টিকা পেয়েছেন ৪ লাখ ২৯ হাজার ২৯৪ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, গণটিকার বিশেষ এ ক্যাম্পেইন আরো দুদিন (আজ ও আগামীকাল) চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকলেও শনিবারের বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা নেয়া যাবে-এমন ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তাছাড়া নিবন্ধন করতে না পারা এবং নিবন্ধন করলেও টিকা না পাওয়া সকলেই বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এসব ঘোষণায় গতকালের বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন ছিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে নিবন্ধনের ঝক্কি ছাড়া টিকা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় মানুষ টিকা নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বলে মনে করেছেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী।
গতকালের ক্যাম্পেইনে টিকা প্রত্যাশীদের অভাবনীয় সাড়া পাওয়া গেছে জানিয়ে এই দুই কর্মকর্তা বলেন, আগে কয়েক ধাপে গণটিকার ক্যাম্পেইন চললেও এবারই সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়েছে। নিবন্ধনের ঝক্কি না থাকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া টিকা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় মানুষ টিকা কেন্দ্রে হাজির হয়েছে। কেন্দ্রে হাজির হওয়া কাউকে টিকা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের পর এলেও টিকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যারা নিবন্ধন করতে পারছিল না এবং নিবন্ধন করতে না পারায় টিকা নিতে পারছিল না, এমন জনগোষ্ঠীকেও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর কোনো অংশই টিকার বাইরে থাকবে না। সরকার সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
নিবন্ধন ছাড়াই টিকা প্রয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন বলছেন, যারা এখনো টিকার প্রথম ডোজ নেননি, কোনো কিছু ছাড়াই ক্যাম্পেইনে তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকলেও তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা ব্যক্তির নাম, বয়স ও মোবাইল নম্বর টুকে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব তথ্যের সাহায্যে ওই ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। কোনো কোনো কেন্দ্রে তাদের কার্ডও দেয়া হচ্ছে। মানুষকে এখন খুব সহজে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার কারণে টিকা কেন্দ্রে অভাবনীয় সাড়া পড়েছে।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গণটিকাদানে সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রতি ওয়ার্ডে ৫টি করে অস্থায়ী কেন্দ্র করা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৪১টি ওয়ার্ডের ২০০টি কেন্দ্রে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জানিয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার। কিন্তু গতকাল সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ মানুষ গতকাল বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
অন্যদিকে, ১৫ উপজেলায় ২০০টি ইউনিয়নে ৬ শতাধিক কেন্দ্রে গতকাল টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, শনিবার ১৫ উপজেলায় মোট ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকা প্রয়োগে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে ৪ লাখ ২৯ হাজার ২৯৪ জন টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার আড়াই গুণ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন উপজেলা পর্যায়ে। গণটিকার বিশেষ এ ক্যাম্পেইন আরো দুদিন (রোববার ও সোমবার) চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের হাতে আরো আড়াই লাখ টিকা রয়েছে। শনিবার বিকেলে আরো চার লাখ টিকার চাহিদা পাঠিয়েছি। রোববার (আজ) সকালের মধ্যেই এসব টিকা পৌঁছে যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। তাই গণটিকার বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকার কোনো ঘাটতি হবে না।
তিন কেন্দ্রে ১২-১৭ বছর বয়সীদের টিকা :
গণটিকার বিশেষ ক্যাম্পেইনের মধ্যেই মহানগরের তিনটি কেন্দ্রে ১২-১৭ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই বয়সী শিক্ষার্থী বা পড়ালেখার বাইরে থাকা যে কেউ এই তিন কেন্দ্রে টিকা নিতে পারছে। কেন্দ্র তিনটি হলো এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সিজেএকএস মিলনায়তন, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাব ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্র। ১২-১৭ বছর বয়সী যে কেউ এই তিন কেন্দ্রে টিকা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। মহানগরের এই তিন কেন্দ্রে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। অবশ্য অন্যান্য কেন্দ্রেও এই বয়সীরা টিকা নিতে পারছেন। সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ হিসেবে তাদেরও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে।
Discussion about this post