ডা. কামরুন নাহার( লুনা),( এমডি, এফসিপিএস)
নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৬ মাস পুরা হয়ে ৭ মাসে পডলে শিশুর আলগা খাবার শুরু করুন।
১. আলগা খাবারটি হবে শক্তি সমৃদ্ধ, প্রয়োজনিয় উপাদান যুক্ত, রোগপ্রতিরোধকারী, সহজ পাচ্য , সহজলভ্য, ও ঘরে তৈরী ।
২.এটি খুব বেশী লবনাক্ত বা খুব মিষ্টি বা বেশী মশলাদার হবেনা , খেতে সহজ, শিশুর পছন্দনীয় হতে হবে।
৩. সহজে ঘরে তৈরী করা যায় এমন খাবারই শিশুকে দিন।
৪. এবয়সেই শিশুর পছন্দ অপছন্দ তৈরী হয় , কোন শিশু মিষ্টি বা কেউ ঝাল খেতে পছন্দ করে। একটু চেষ্টা করলেই তার পছন্দ অপছন্দ বুঝতে পারবেন । তার খাবারও সেই মত তৈরী করুন।


৫.কিভাবে আরম্ভ করবেন
# প্রথমে একটি মাত্র খাবার শুরু করুন। যেমন পাকা কলা চটকে নিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথমে ৩থেকে ৪ চামচ, আস্তে আস্তে পরিমান বাডাবেন। ভুল ধারণা আছে যে কলা খেলে ঠান্ডা লাগে । এটা ঠিক নয় । শীত কালেও কলা খাওযানো যাবে।এতে ঠান্ডা লাগার কোন উপাদান নেই।
# খুব দ্রুত বা তিন চারটা খাবার একসাথে শুরু করবেন না । প্রথম প্রথম কারো কারো ক্ষেত্রে যা খাওয়াবেন তাই পায়খানার সাথে বেরিয়ে যেতে পারে । এটা নরমাল , কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
# এক সপ্তাহ পর ২য় খাবারটি শুরু করুন। যেমন চাল , ডাল ও সব্জী দিয়ে তৈরী খিচুরী। আস্তে আস্তে একের পর এক মাছ , মাংস , ডিম খাবারে যোগ করুন।
# ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বাচ্চাকে এই বিভিন্ন উপাদানের পরিচিত করানো শেষ করুন।
# ৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশুকে পারিবারিক খাবারে অভ্যস্ত করে তুলুন।
# আলগা খাবারের পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ দিন।৬. কতটুকু খাওয়াবেন
# ৬মাস থেকে ৯মাস পর্যন্ত দিনে ২ বার(২০০কিলো ক্যালোরি) পরিমান ২৫০ মিলি বাটি বা সুপের বাটির আধা বাটি ২ বার।
#৯মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ৫ বার(৩টা বড ২টা ছোট মিল) পরিমান ২৫০ মিলি বাটির আধা বাটি ৩বার , সাথে ২টা স্ন্যাকস বা নাসতা।সময়: বড মিল গুলো সকাল , দুপুর ও রাত এই ৩ মিলের মাঝখানে ২টা নাস্তা।
# ১বছর থেকে ২বছর পর্যন্ত আগের মত ৫ বার পরিমান : ২৫০ মিলি বাটি পুরা বাটি
৭ . খাবারগুলো খীচুরী ই হবে । প্রথম প্রথম চামচ দিয়ে চটকে নরম করে নিন । আস্তে আস্তে শক্ত খাবারের দিকে যাবেন।১ বছরে শিশুর দাত উঠে যায় , তখন সেমি সলিড বা সলিড খাবার দিন। নাস্তা গুলো ফল , ফলের রস , পায়েস , পাউরুটি, আলু ভাজা ফ্রেন্চ ফ্রাই, মুরগী বুকের মাংশ ময়দাতে ডুবিয়ে ভেজে দিন। বিভিন্ন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করুন।
৮.ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে খাবার দেবেন না । এতে করে সলিড পরে খাবার আর সে নিতে চাইবে না, চিবানোর অভ্যাসও হবেনা। এই তরল খাবারের খাদ্যমানও কম।
৯. খাওয়ার জন্য বাচ্চাকে জোর করবেন না। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই খাবার শেষ করুন। খাবার পরিমান শিশুকেই নির্ধারণ করতে দিন। ঐ২০ মিনিটে যা খাবে ঐটাই তার পরিমান।
১০.হাইজিনিক করে শিশুর খাবার তৈরী করুন। ঠিকমতো রান্না করুন। খাওয়ার আগে থালাবাটি , হাত ও শিশুর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
১১. খাবারের পরিমান ক্রমান্বয়ে বাডান।তাডহুডা করবেন না.। আলগা খাবার বাডানোর সাথে সাথে বুকের দুধ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দিন। ক্রমান্বয়ে খাবারের ঘনত্বও বাডান। মন্ রাখবেন , ঘন খাবারের খাদ্যমান তরল খাবারার চাইতে বেশী।
১২. আলগা খাবার দেওয়ার আগে ২থেকে ৩ ঘন্টা শিশুকে না খাইয়ে রাখুন। তাতে তার খাওয়ার পরিমান বাডবে।
১৩.বাইরের খাবার কমার্সিয়াল জুস , চিপস্ , চকলেট প্রথম থেকেই বাচ্চাকে চেনাবেন না। দেবেন ও না। এটা অভ্যাসের ব্যাপার
১৪.অসুস্থ হলে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার দিন , বেশি বেশি পানি খাওয়ান। এ সময় পানির প্রয়োজনিয়তা বাডে।
১৫. টেলিভিশন বা মোবাইল ইত্যাদি দিয়ে খাওয়ার সময় বাচ্চার মনোযোগ সরাবেন না বরং খাবারের প্রতি শিশুর পুর্ন মনেযোগ রাখুন।
১৬. হেটে হেটে খাওয়াবেন না । এক জায়গায় বসে খাওয়ার অভ্যাস করুন । পরিবারে সকলে খেতে বসলে শিশুকে সাথে বসান এবং তাকে আলাদা তার বাটিতে খাবার দিনও নিজে খেতে উৎসাহিত করুন।
১৭. খাবার গুলো সাজিয়ে দিন । খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। সব চাইতে ভালো হয় ৭ দিনের একটি রুটিন করে নিন। একই খাবার প্রতিদিন দেয়ার চাইতে বিভিন্ন ধরনের খাবার অদল বদল করে দিন।
১৮. ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের একেবারেই টিভি দেখতে দেবেন না। ২থেকে ৬ বছর বয়সি শিশু প্রতিদিন ২ ঘন্টার কম সময় টিভি দেখতে দিতে পারেন।
Discussion about this post