হার্টবিটডেস্ক
অস্ত্রোপচার করে ৫৫ বছর বয়সি এক নারীর স্তন থেকে ১০.২৮ কিলোগ্রামের টিউমার বাদ দিলেন চিকিৎসকরা। তাও আবার সাধারণ কোন টিউমার নয়। এই টিউমারের নাম ‘ফিলোডস টিউমার’। আমেরিকান ক্যানসার সেন্টারের মতে ফিলোডস খুবই বিরল একটি টিউমার।ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কলকাতা শহরে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় এমনটাই বলা হয়েছে।
জানা যায়, দুই মাস আগে ভারতের কলকাতা শহরের বালিগঞ্জের বাসিন্দা এই নারী বাস থেকে নামার সময় একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তার ডান দিকের স্তনে আঘাত লাগে। তারপর থেকেই তিনি লক্ষ্য করেন যে, তার ডান দিকের স্তনে একটু ফোলা ভাব দেখা দিয়েছে। তারপরের কয়েক দিনে এই ফোলা অংশ আয়তনে ক্রমশই বাড়তে থাকে। একদিন অজ্ঞানও হয়ে যান তিনি।
পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, নারীর রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে ৩০-৩৫ এমজি/ডিএল-এর মধ্যে থাকছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘হাইপোগ্লাইসিমিয়া’।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করার পরেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। ততদিনে স্তনের ফোলা অংশ প্রায় কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে। নারীর কোর বায়োপ্সি রিপোর্ট এলে পরিষ্কার হয় যে, তার স্তনে বাসা বেঁধেছে টিউমার।
এরপরই তার পরিবারের সদস্যরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্রেস্ট এন্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রর কাছে নিয়ে আসেন।
ধৃতিমান সন্দেহ করেন যে, তার স্তনে ফিলোডস টিউমার হয়েছে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রোগীর অগ্নাশয়ে অন্য একটি বিরল টিউমার ‘ইনসুলিনমা’ থাকতে পারে বলেও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এরপরই এই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করা হয়। তবে রক্তে ইনসুলিন ও সি-পেপটাইড মেপে এবং আরও কিছু রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে রোগীর ইনসুলিনমা নেই। বরং তার জায়গায় অন্য একটি বিরল লক্ষণ রয়েছে। তার স্তনের টিউমার থেকে নিঃসৃত হচ্ছে ‘আইজিএফ-২’ নামক এক প্রোটিন হরমোন, যা ইনসুলিনের মতোই রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।
এরপরই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় বাদ দেওয়া হয় বিশালাকার এই টিউমার। অস্ত্রোপচারে ধৃতিমানকে সাহায্য করেন চিকিৎসক শতক্রতু বর্মন, চিকিৎসক অন্তরীপ ভট্টাচার্য ও চিকিৎসক শুভ রায়।
ফিলোডস টিউমার-কে বিরল বলে মানতে নারাজ ধৃতিমান অস্ত্রোপচারে শেষে বলেন, ‘এত বড় টিউমার আমি এর আগে কখনও দেখিনি। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরাও খুশি। রক্তে শর্করার পরিমাণও আগের থেকে বেড়েছে।’
Discussion about this post