নিউজ ডেস্ক
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। যা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ডা. একে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিস হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান অন্যতম অসংক্রামক ব্যাধি। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন জীবনযাত্রার কারণে মূলত দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অপর্যাপ্ত শরীর চর্চা এবং ফাস্টফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাস সহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
প্রফেসর আজাদ বলেন, ‘দেশে প্রায় ৮৫ লাখ লোক ডায়াবেটিসে ভুগছে। এদের মধ্যে ৫ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী এবং ৯৫ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী।’
ডায়াবেটিস রোগের ধরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ লোকই সচেতনতার অভাব এবং পুষ্টিকর খবর সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগত কারণসহ অনেকগুলো কারণ ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি তাহলে আমরা ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারি। ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে।’
প্রফেসর আজাদ বলেন, ‘ডায়বেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অগ্নাশয় যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা শরীর যখন উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না তখনই এই রোগ সৃষ্টি হয়। ইনসুলিন একটি হরমোন যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রন করে।’
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস, অগ্নাশয় যখন খুব সামান্য ইনসুলিন উৎপাদন করে অথবা কোন ইনসুলিন উৎপাদন করে না তখন এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। শক্তি উৎপাদনের জন্য কোষে সুগার (গ্লুকোজ) সরবরাহে ইনসুলিন হরমোনের প্রয়োজন হয়।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীর সুস্থ্য থাকার জন্য নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়, ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে ইনসুলিন নিতে হয় না, তবে যখন এটি গুরুতর হয়ে ওঠে তখন তাদের ইনসুলিন নিতে হয়।
তিনি এই দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে জনগণের জীবন বাঁচাতে বিনামূল্যে ইনসুলিন সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
প্রফেসর আজাদ বলেন, ‘ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই, টাইপ-১ ডায়াবেটিস জটিলতায় হার্ট, রক্তনালী, স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক লোক ডায়াবেটিস অথবা ডায়াবেটিস জনিত জটিলতায় মারা যায়।’
রক্তে স্বাভাবিক মাত্রায় সুগার নিয়ন্ত্রন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়ে অনেক জটিল ঝুঁকি তৈরি করে এ কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ড্রেক্রাইনোলজি (হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাত্রা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন দেশে ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে।
ডায়াবেটিসের দুটি সাধারণ ফর্ম টাইপ-১ ও টাইপ-২ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যে, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিস খুব দ্রুত বাড়ছে। কারণ হচ্ছে শিশুরা সীমাবদ্ধ জায়গার মধ্যে বেড়ে উঠছে এবং বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই।’
তিনি বলেন, ‘শিশুরা একইভাবে তাদের বাসস্থানে বিশেষ করে দেশের মেট্রোপলিটান সিটিগুলোতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।’
বেশীরভাগ লোকই তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জানেন না উল্লেখ করে সেলিম বলেন, এর ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস টাইপ-১ ডায়াবেটিসে পরিণত হয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, ‘বেশীরভাগ লোকের ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এই দীর্ঘস্থায়ী রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে অবশ্যই এ বিষয় আমাদের শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে শিশুরা এই নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।’
সেলিম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘অনেক গর্ভবতী নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণে শিশু মৃত্যু হার বাড়ছে।’
সূত্র : বাসস
Discussion about this post