ডা. হারাধন দেবনাথ
সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ হলো মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ একধরনের রক্তক্ষরণ, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথার আঘাতের কারণে হয়ে থাকে। আঘাত ছাড়াও মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের কারণেও হয়। অ্যানিউরিজম হলো মস্তিষ্কের ধমনির একটি বেলুনিং বা ফোলা অংশ, যা আকস্মিক ফেটে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়।
সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ একটি জরুরি অবস্থা। এ রকম অবস্থা হঠাৎ ঘটলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন এমন কিছু হয়েছে?
লক্ষণ
যখন এ রকম কোনো রক্তপাতের ঘটনা ঘটে, তখন সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো হঠাৎ মারাত্মক মাথাব্যথা শুরু হওয়া। এটিকে রোগীদের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে খারাপ মাথাব্যথা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। মানে এত প্রচণ্ড মাথাব্যথা তাঁরা আর কখনো অনুভব করেননি। তবে কখনো কখনো লোকে রক্তক্ষরণের আগে মাথার মধ্যে একটি হালকা ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
আরও কয়েকটি উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন ঘাড় ব্যথা, শরীরে অসারতা, কাঁধে ব্যথা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, একটি জিনিসকে দুটি দেখা বা ডাবল ভিশন, বমি বমি ভাব, খিঁচুনি ও বিভ্রান্তি।
সাবএরাকনয়েড হেমোরেজের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই দেখা দেয় ও রোগী প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করার পর হঠাৎ জ্ঞান হারাতে পারেন। যদি এ রকম ঘটে, তবে অবিলম্বে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঝুঁকি ও কারণ
সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটতে পারে বা হতে পারে মাথার আঘাতের কারণে। যদি এটি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তবে এটি মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। আগেই বলা হয়েছে, অ্যানিউরিজম হলো মস্তিষ্কের ধমনির একধরনের অস্বাভাবিকতা।
যখন একটি অ্যানিউরিজম বিস্ফোরিত হয়, এটি দ্রুত রক্তপাত ঘটায় আর মস্তিষ্কের মধ্যে একটি জমাট রক্ত তৈরি করে। এই ব্রেন অ্যানিউরিজম নারীদের বেশি দেখা যায়, অনেকের জন্মগতভাবেই থাকে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ধূমপান ঝুঁকি বাড়ায়। মাদকাসক্তি ঝুঁকি বাড়ায়। কখনো কখনো মস্তিষ্কে আঘাতের ফলেও অ্যানিউরিজম হতে পারে, যার ফলে সাবএয়াকনয়েড হেমোরেজ হয়।
রক্ত পাতলা করার যন্ত্রের ব্যবহার বা ধমনি বিকৃতি থেকে রক্তপাতের কারণেও হেমোরেজ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, দৃষ্টি সমস্যা বা আকস্মিক জ্ঞান হারানো রোগীর ঘাড় শক্ত দেখলে চিকিৎসক সাবএরাকনয়েড হেমোরেজ হয়েছে বলে সন্দেহ করে থাকেন। দ্রুততম সময়ে মাথার সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হলে রোগনির্ণয় সহজ হয়।
ট্রান্সক্র্যানিয়াল আলট্রাসাউন্ড মস্তিষ্কের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। সেরিব্রাল এনজিওগ্রাফি স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা
রোগীর জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের ক্ষতির মাত্রা কমাতে প্রাথমিক চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কে রক্তপাত ঘটার পর চাপ তৈরি হতে পারে, যা রোগীকে কোমা বা অচেতন অবস্থায় নিয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এরপর রক্তপাতের কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কারণ, একই অ্যানিউরিজম থেকে নতুন করে রক্তপাত শুরু হতে পারে। ক্লিপিং করে অ্যানিউরিজম বন্ধ করতে এবং ভবিষ্যতে রক্তপাতের ঝুঁকি কমাতে অস্ত্রোপচার দরকার হয়। এই অপারেশন মাথার খুলি কেটে করা হয়। তবে এনিউরিজম কয়েলিং করা যেতে পারে।
এর বাইরে সতর্কভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, খিঁচুনি প্রতিরোধক, মাথাব্যথার উপশমকারী দরকার হয়। চিকিৎসার পরেও রোগী জটিলতার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা হলো বারবার রক্তপাত। বারবার রক্তপাত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরে খিঁচুনি বা স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ডা. হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সু
Discussion about this post