হার্টবিট ডেস্ক
কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়েই গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন ধরণের তথ্য ও নির্দেশনা থাকার কারণে অনেক সময়ই এগুলো বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু টিকা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য রয়েছে যা জানা থাকলে এ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব।
ভ্যাকসিন বা টিকা কী?
টিকা মানুষের দেহকে নির্দিষ্ট কোন একটি সংক্রমণ, ভাইরাস কিংবা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত করে। টিকায় মূলত যে বস্তুটির কারণে ওই রোগটি হয় তার একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ থাকে যাকে “ব্লু-প্রিন্ট” বলা হয়।
এই অংশটি দেহে একই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরবর্তীতে ওই ভাইরাসের আক্রমণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
টিকার কারণে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম তবে অনেকের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, হাতে ব্যথা বা হালকা জ্বর।
তবে এর পরের ধাপ হচ্ছে, আপনি ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জন করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি’র মতে ভ্যাকসিন বা টিকার সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়টি হচ্ছে, অন্য ওষুধগুলো যখন কোন একটি রোগের প্রতিকার করে বা সারিয়ে তোলে, টিকা সেখানে ওই রোগটিকেই প্রতিরোধ করে।
টিকা কি নিরাপদ?
টিকার একটি আদি রূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ১০ম শতকে চীনে। তবে ১৭৯৬ সালের আগে এটি স্বীকৃতি পায়নি। সেবছর এডওয়ার্ড জেনার দেখেন যে, কাউপক্স বা গোবসন্ত রোগের মৃদু সংক্রমণ গুটি বসন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তিনি তার এই তত্ত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই বছর পর গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন এবং তখন থেকে ল্যাটিন শব্দ “ভ্যাকা” থেকে ভ্যাকসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়। ল্যাটিন ভাষায় ভ্যাকা শব্দটির অর্থ হচ্ছে গরু।
আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ধরা হয় ভ্যাকসিন বা টিকাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভ্যাকসিন বা টিকার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০-৩০ লাখ মৃত্যু প্রতিরোধ করা এবং ২০টির বেশি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
সিডিসি বলছে যে, কোন টিকা বাজারে আনার আগে সেগুলো নানা ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানবদেহে প্রয়োগের আগে সেগুলো ল্যাবে প্রাণীর উপর পরীক্ষা করা হয় এবং সেটা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অনুমোদন নেয়া হয়। ঝুঁকি আছে, কিন্তু ওষুধের তুলনায় ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুটি বসন্তের কথা যাতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে টিকার কল্যাণে।
তবে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করতে কয়েক দশকও লেগে যায়। গত বছরের অগাস্টে মাত্র আফ্রিকাকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই রোগের টিকাদান কর্মসূচি সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে আরো ৩০ বছর আগে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, সারা বিশ্বের মানুষকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া এবং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।
টিকা কীভাবে তৈরি হয়?
কোন একটি রোগের জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট কিংবা ফাঙ্গাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরের অ্যান্টিজেন উপাদানটি অ্যান্টিবডির উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
সচরাচর, দৈনন্দিন জীবনাচরণের সময় কোনো দেহে জীবাণু প্রবেশ করার আগে অ্যান্টিজেনের একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয় টিকা। তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ওই আসল জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং প্রতিহত করে।
নতুন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই আসলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করা হয়েছে।
কোভিডের টিকা কীভাবে তুলনা করা হয়?
ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্না দুটি টিকাই মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন যা ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যবহার করে।
দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এই টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি “স্পাইক প্রোটিন” তৈরি করতে হবে। এই স্পাইক প্রোটিনটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপরিভাগে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে অ্যান্টিবডি দরকার হয় সেটি তৈরি করতে সাহায্য করে এই প্রোটিন।
অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আবার আলাদা- শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করতো যে সাধারণ সর্দি লাগার ভাইরাস বিজ্ঞানীরা সেটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে তার সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক কোডের কিছু অংশ জুড়ে দিয়েছেন।
এই তিনটি টিকাই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জন্য অনুমোদিত। মেক্সিকো, চিলি এবং কোস্টারিকায় ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলে অক্সফোর্ড ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অনুমোদন রয়েছে।
আরো কী কী কোভিড ভ্যাকসিন রয়েছে?
বেইজিং ভিত্তিক সিনোভ্যাক এর তৈরি করা করোনাভ্যাক নামের টিকা এরইমধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সে দেয়া শুরু হয়েছে। এই টিকাটি প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ ভাইরাসের মৃত বা নিষ্ক্রিয় অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
তবে এই ভ্যাকসিনটির কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য আসার পর এই প্রশ্ন ওঠে। আর ব্রাজিলের গবেষকরা এরই মধ্যে বলেছে যে এই টিকাটি মাত্র ৫০.৪% কার্যকর।
ভারতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাক্সিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে।
রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে। যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। এই টিকাটি আর্জেন্টিনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে টিকাটির ৩ লাখ ডোজ অর্ডার করেছে দেশটি।
ফাইজার, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসনের প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। তবে জনসন এন্ড জনসন কোম্পানির টিকাটি এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।
তবে গ্লোবাল কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আরো ৬০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নের। কোভ্যাক্স কর্মসূচিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গাভি নামে একটি ভ্যাকসিন অ্যালায়্যান্সের যৌথ তত্ত্বাবধানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করতে পরিচালিত হয়।
আপনার কি টিকা নেয়া উচিৎ?
বিশ্বের কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে কোন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সবাইকেই এই টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এই টিকা। সেই সাথে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করে। এই টিকাকে মহামারি থেকে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, সংক্রমণ ছড়ানোকে বাধাগ্রস্ত করতে হলে ৬৫% থেকে ৭০% মানুষের টিকা নিতে হবে। তার মানে হচ্ছে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক মানুষ অবশ্য যে দ্রুততার সাথে কোভিড এর টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
যদিও এটা সত্য যে, বিজ্ঞানীরা একটা টিকার নকশা ও ট্রায়াল করতে কয়েক বছর পার করে দেন, তবে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার পক্ষে বৈশ্বিক স্বার্থ কাজ করার কারণে করোনা টিকার উৎপাদন দ্রুততর হয়েছে। আর এই কাজটি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করেছে।
সংক্ষেপে, টিকাদান কর্মসূচি কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেবে এবং হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করবে। এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারবো তত দ্রুত আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।
করোনাভাইরাসের কতগুলো টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে?
বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে নেমেছে ২শ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, তাদের তালিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে ১৫৪টি ভ্যাকসিন।
এছাড়া ফেস-ওয়ানে ছোট আকারে নিরাপত্তা নিয়ে ট্রায়ালে রয়েছে ২১টি ভ্যাকসিন। ফেস টু-তে নিরাপত্তা ট্রায়ালে রয়েছে ১২টি এবং ফেস-থ্রি-তে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং কার্যকারিতার ট্রায়ালে রয়েছে আরো ১১টি ভ্যাকসিন।
আরো যেসব টিকার ট্রায়াল এখনো চলছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি। বলা হচ্ছে এটি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের মতোই কাজ করবে এবং এটি ৯২% সুরক্ষা দেবে বলে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে জ্যানসেন’স নামের একটি টিকা। পুরো বিশ্বে এই টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী।
চীনের সিনোফার্ম ও উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটেরও একটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে রয়েছে।
কোন কোন দেশে টিকা দেয়া হচ্ছে?
করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলে এখনও পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে টিকা দেওয়ার এটাই সর্বোচ্চ হার।
ইসরায়েলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১১.৫৫ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই রয়েছে বাহরাইন। সেদেশে এই হার ৩.৪৯। তৃতীয় স্থানে ব্রিটেন, হার ১.৪৭।
ফ্রান্সে ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া, কিন্তু ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে।
বাংলাদেশে কোন টিকা দেয়া হচ্ছে?
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দেয়া হবে।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে এই টিকাটি আনা হচ্ছে। সিরাম ইন্সটিটিউট এই টিকাটি উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতে তারাই এই টিকাটি উৎপাদন করছে।
সিরাম ইন্সটিটিউট- যারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক, তারা প্রতিমাসে পাঁচ কোটি টিকা তৈরি করছে।
ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এর মধ্যেই বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও সেশেলসে পাঠানো হচ্ছে।
এসব চালানের কোনটি যাচ্ছে উপহার হিসেবে, আর কোনটি সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে করা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে।
এ ছাড়াও ভারত কোভিশিল্ড পাঠাচ্ছে শ্রীলংকা, আফগানিস্তান ও মরিশাসে। ব্রাজিলে এ টিকা পাঠানো হবে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী।
কোভিশিল্ড কতটা কার্যকর?
কোভিশিল্ড দেয়া হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে এবং যে কোন রকম করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়।
চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয়, এবং এটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়- ফলে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার চেয়ে এটি সহজে বিতরণযোগ্য।
আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি প্রথমে আধা ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হলে তার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
তবে এই পদ্ধতিতে টিকাটি দেবার পক্ষে যথেষ্ট স্পষ্ট উপাত্ত নেই।
সিরাম ইন্সটিটিউট বলছে, কোভিশিল্ড উচ্চ মাত্রায় কার্যকর এবং ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের উপাত্তে তার সমর্থন মিলেছে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন একটা নিরাপদ ভ্যাকসিন।
তবে ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেমন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জায়গায় ফুলে যাওয়া, সামান্য জ্বর হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ও শরীর ব্যথা।
ফাইজার, অক্সফোর্ড ও মডার্নার টিকার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া, মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জ্বর, শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি।
তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভারতে টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশো জনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টিকা দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও শোনা গেছে। তবে ভারতের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ওই মৃত্যুর সাথে টিকার কোন সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশটিতে বিনামূল্যের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর টিকা গ্রহণকারী কারো মধ্যে যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে কারা প্রথম টিকা পাবেন?
টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ক্যাটাগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।
এই ১৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে:
সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম-কর্মী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।
টিকা নেয়ার আগে কী কী জানা জরুরি?
ব্রিটেন ও আমেরিকায় যে টিকাগুলো অনুমোদন পেয়েছে সেখানে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে বলা হচ্ছে।
যেমন কোন কোন সমস্যা থাকলে টিকা নেয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।
টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে যে আপনার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বা আপনি কোন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা।
যেমন, আগে কোন টিকায় তীব্র এলার্জি দেখা দেয়া, তীব্র জ্বরসহ অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা, রক্তপাত বা আঘাতের কোন সমস্যা থাকা, গুরুতর অসুস্থতা, গর্ভবতী বা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে কিনা- এবিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।
আর যে টিকা আপনি নিতে যাচ্ছেন সেগুলোর সাধারণ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে বিষয়টিও জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন।
Discussion about this post