হার্টবিটডেস্ক
করোনার থাবায় নাকাল বিশ্ববাসী। ভাইরাসটির তাণ্ডব কিছুদিন আগেও যেখানে নিম্নমুখী ছিল, কিন্তু সম্প্রতি শনাক্তের হার বেড়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বড় ধরনের চাপের মুখে ফেলেছে।
গত কয়েক দিন ধরে বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও আবার তা বেড়েছে। এ অবস্থায় কোভিড থেকে সেরে উঠলেও শিশু রোগীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস।
গত দু’বছরে ছোটদের করোনা সংক্রমণের ঘটনা কমই চোখে পড়েছে। অতিমারির একেবারে গোড়ায় প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ডেল্টা স্ট্রেনে মাঝ বয়সীদের বেশি ভুগতে দেখা গেছে। বর্তমানে ওমিক্রন স্ট্রেনে ছোটদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। ওমিক্রনে প্রাণ সংশয় হয়তো কম, কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
বিশেষজ্ঞেরা জানান, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অনেক শিশুরই টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)।
ইউরোপে ইতোমধ্যেই এ রকম একাধিক ঘটনা রিপোর্ট করেছেন চিকিৎসকেরা।
তারা জানিয়েছেন, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে ছোটদের মধ্যে। কারও কারও ‘ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস’ দেখা যাচ্ছে। এতে রক্তে উপস্থিত শর্করা থেকে শক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হচ্ছে না। এ অসুখে শিশুর প্রাণসংশয়ও ঘটতে পারে।
সিডিসি জানিয়েছে, মেডিকেল ইনসিয়োরেন্সের নথি পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমেরিকাতেও কোভিডের পরে ১৮ বছর বয়সের নিচে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সিডিসির গবেষক শ্যারন সায়াদ বলেন, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া কিন্তু খুবই বিপজ্জনক।
রিপোর্টের মূল লেখক সায়াদ জানিয়েছেন, কিছু বিষয় এখনও অস্পষ্ট। যেমন কোভিডের পরে ধরা পড়া ডায়াবেটিস মারাত্মক রূপ নেবে কি না জানা নেই। এও স্পষ্ট নয়, এটি সাময়িক অসুস্থতা নাকি।
যে সব শিশু কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের বাবা-মায়ের জন্য সায়াদের পরামর্শ, ভালো করে সন্তানের ওপরে নজর রাখুন। ডায়াবেটিসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যান। যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদেরও বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন সায়াদ।
যেসব শিশু এখনও কোভিড আক্রান্ত হয়নি, তাদের মা-বাবাকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন সায়াদ। তা হলো—অবশ্যই সন্তানকে মাস্ক পরাতে হবে, পরিবারের বাইরে মেলামেশা থেকে আপাতত দূরে রাখতে হবে।
আমেরিকায় ৫ বছর বয়স পর্যন্ত টিকাকরণে ছাড়পত্র রয়েছে। ইউরোপেও ছোটদের টিকাকরণ চলছে। কিন্তুর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে শিশুদের টিকাকরণ এখনও শুরু হয়নি। এ সব দেশে শিশুদের কোভিড থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন সায়াদ। কারণ শুধু ভাইরাসের আক্রমণ নয়, তার পরে থাকছে ডায়াবেটিসের মতো রোগের আশঙ্কাও।
করোনা-বিধি ছাড়াও ছোটদের শরীরচর্চায় যুক্ত করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অতিমারিতে গৃহবন্দি দশায় ওজন বাড়ছে। বাচ্চাদের অস্বাভাবিক ওজন-বৃদ্ধিও ডায়াবেটিস ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: আনন্দবাজার
Discussion about this post