হার্টবিট ডেস্ক
প্রতিবছর দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত নতুন শিশু রোগী শনাক্ত হয় ১৩ থেকে ১৪ হাজার। কিন্তু শিশু ক্যানসার রোগীদের জন্য হাসপাতালে বেড রয়েছে মাত্র ১২০টি।
চিকিৎসকরা বলছেন, যত শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, সে হারে তারা চিকিৎসার আওতায় আসছে না। আবার অনেকের ডায়াগনোসিসই হচ্ছে না। চিকিৎসকরা বলছেন, ২০০৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ এ হার গিয়ে দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে।
সারাদেশের সব হাসপাতালগুলোতে একসঙ্গে মাত্র ১২০টি শয্যা রয়েছে যেখানে বেডে রেখে শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া যায়।
যা শনাক্ত হয় তার মধ্যে কেবলমাত্র ৪০ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আসে। কিন্তু যেসব শিশু শনাক্ত হয় তার মধ্যে বড় একটি অংশ চিকিৎসা নেয় না, আরেকটি অংশ চিকিৎসার আওতায় এলেও পুরো চিকিৎসা সম্পন্ন করে না, মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ, কিছু আছে লেফট আউট যারা একেবারেই চিকিৎসা নেয় না, আর কিছু আছে ড্রপ আউট, যারা চিকিৎসা নিলেও ঝরে পড়ে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৩৫ শতাংশ আক্রান্ত হয় ব্লাড ক্যানসারে।এরপর রয়েছে লিম্ফোমা। কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক ও হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও কম নয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, বড়দের মতো শিশুদের ক্যানসার কেন হয় তার উত্তর নেই। বড়দের ক্ষেত্রে বলা যায়, ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্যানসার হয়, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার কারণে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে, কিন্তু শিশুদের ক্যানসারের মধ্যে শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের কারণ অজানা।বাকীদের মধ্যে কিছুটা বংশগতভাবে বাকীটা পরিবেশগত কারণে।
তবে আশার কথা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যানসার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৫৯ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত ৭৪২ শিশু, লিম্ফোমাতে আক্রান্ত হয়েছে ২০৯ জন, কিডনির ক্যানসার ১১৯, মাসেল ক্যানসার ৯৩, নিউরোব্লাস্টোমা আক্রান্ত ৭৭টি শিশু। এছাড়া রয়েছে জার্ম সেল টিউমার, লিভার ক্যানসার, বোন ক্যানসারসহ আরও কিছু ক্যানসারের ধরন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রোগী ছিল ৭৩৭ জন। আর ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত রোগী সংখ্যা হচ্ছে ৭৪২ জন। গত তিন বছরে রোগী সংখ্যা ছিল তার আগের পাঁচ বছরের সমান।’
তিনি বলেন, ‘শিশু ক্যানসার সরাসরি কোনও কারণের সঙ্গে রিলেটেড নয়। শতকরা ৯০ শতাংশেরই কারণ অজানা। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এটা বের করতে পারেনি, যেমনটা- বড়দের ধূমপান, হেপাটাইটিস বি বা সি’তে আক্রান্ত হলে তার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে ১৮ বছর পর্যন্ত। কিন্তু একেক ক্যানসারের প্রবণতা একেক বয়সে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সবকিছুর মধ্যেও আবার ব্লাড ক্যানসারের হার বেশি। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের মধ্যে ব্লাড ক্যানসার বেশি হয়। আবার নিউরোব্লাস্টোমা হয় আরও কম বয়সে। লিভার এবং কিডনি ক্যানসার হয় এক থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের।
তবে বর্তমানে শিশু ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য মানুষের সচেতনতা বাড়ছে মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যার কারণে শিশু ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা আরও প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
জেলা পর্যায়েও যদি শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় তাহলেও তারা চিকিৎসার আওতায় আসে। কারণ শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসা করালে ভালো হয়। আর এজন্য দরকার সঠিক সময়ে সময়ে জায়গায় চিকিৎসা নেওয়া। তাই শিশু ক্যানসার রোগীদের জন্য অনেক বেশি নজর দেওয়া উচিত।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০১৪ সালে নতুন রোগী ভর্তি হয় ৩৬৮ জন, ২০১৫ সালে ভর্তি হয় ৩৮৬ জন, ২০১৬ সালে ভর্তি হয় ৩৮৮ জন, ২০১৭ সালে ভর্তি হয় ৪৬৪ জন, ২০১৮ সালে ভর্তি হয় ৬৩৬ জন আর ২০১৯ সালে ভর্তি হয় ৬৬৩ জন।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়, কিন্তু তার খুব অল্প রোগী চিকিৎসার আওতায় আসে, যেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অথচ শিশুদের ক্যানসার ভালো হয়, যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা যায়, তাহলে ক্যানসার ভালো হয়।
Discussion about this post