হার্টবিটডেস্ক
চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা এবং এ লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত নতুন প্রেষণ নীতিমালা প্রবর্তন করেছে সরকার। রোববার (২ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর স্বাক্ষরিত এ নীতিমালা প্রকাশিত হয়।
‘স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা এবং তদুদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত প্রেষণ নীতিমালা-২০২২ (সংশোধিত)’ শীর্ষক নীতিমালায় বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বেসরকারি ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত সরকারি চিকিৎসকদের সম্পন্ন করা কোর্সের অংশ বিশেষ নিয়ে জটিলতার অবসান হলো।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত প্রকল্পের চিকিৎসকদের চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম পাঁচ বৎসর পূর্ণ না হলে প্রেষণ প্রদান করা হবে না।
নীতিমালা সংশোধনের প্রেক্ষাপট
নতুন নীতিমালা প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, ‘চিকিৎসকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। চিকিৎসকগণ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। তারপর তাহারা প্রেষণ বা শিক্ষা ছুটির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিয়া থাকেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও ইনস্টিটিউটসমূহে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হইয়াছে। এইসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি চিকিৎসকদের বাহিরেও বেসরকারি চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অনেক সরকারি চিকিৎসক দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি নিয়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিয়া থাকেন, অনেকে যথা সময়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হইতে পারিবার কারণে বারবার প্রেষণ বা অসাধারণ ছুটি নিয়ে থাকেন। একদিকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা প্রেষণ/ছুটিতে ভ্রমণ করেন, অন্যদিকে অনেকে যথাযথ শৃঙ্খলার অভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদের অধিক সময় উচ্চশিক্ষার জন্য অতিবাহিত করেন। এতে করিয়া বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা ডিউটি পোস্টের বাইরে অবস্থান করেন। সেই কারণে মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসকদের সংকট দেখা দেয়। দেশব্যাপী, বিশেষ করে গ্রামে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করিবার জন্য এ ধরনের অসঙ্গতি দূর করা প্রয়োজন। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চাহিদা পূরণ এবং সেবার মান উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সরকারি চাকরিরত তরুণ চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি চাকুরিরত চিকিৎসকদের দেশের অভ্যন্তরে স্নাতকোত্তর উচ্চশিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে সুষম ও ভারসাম্যমূলক এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হইলো।’
বিভিন্ন কোর্সের মেয়াদ ও ছুটি
নীতিমালায় বলা হয়েছে,
ক. সাব-স্পেশালিটিসহ প্রতিটি কোর্সের শেষে পরীক্ষা সম্পন্ন করিবার জন্য কোর্সের মেয়াদের সাথে অতিরিক্ত দুই মাস সময় যোগ করে কোর্সের মেয়াদ হিসাব করা হইবে এবং তদনুযায়ী মঞ্জুর করা হইবে।
খ. এমডি/এমএস/এমফিল/এফসিপিএস বা সমপর্যায়ের কোর্সের পার্ট-১, পার্ট-২, পার্ট-৩ তিনটি পর্বের জন্য একসঙ্গে প্রেষণ মঞ্জুর না করিয়া প্রতিটি পর্বের জন্য কোর্সের মেয়াদ অনুযায়ী প্রেষণ মঞ্জুর করা হইবে। কোনো পর্ব উত্তীর্ণ হইবার পরই কোর্সের পরবর্তী পর্বের জন্য প্রেষণ প্রাপ্য হইবেন।
গ. এমডি/এমএস রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের ক্লিনিক্যাল বিষয়ে ফেজ-এ পর্বে দুই বৎসর এবং ফেজ-বি পর্বে তিন বৎসর মেয়াদে প্রেষণ প্রাপ্য হইবেন।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত প্রেষণ নীতিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত ১১টি বিষয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হলো:
ক. পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য প্রেষণ মঞ্জুর সংক্রান্ত বিধান;
খ. এমডি/এমএস রেসিডেন্সি কোর্সের মেয়াদ ০৫ বছরের পরিবর্তে ০৩ বছরকরণ;
গ. স্বেচ্ছায় কোর্স ত্যাগের পাশাপাশি কোর্স আউটের বিধান অন্তর্ভুক্তকরণ [প্রেষণ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৪(ঘ)];
ঘ. সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংশোধন (প্রেষণ নীতিমালার পরিশিষ্ট-‘ঙ’);
ঙ. সাব-স্পেশালিটি ডিগ্রির মঞ্জুরকৃত প্রেষণ মেয়াদের সাথে পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ০২ (দুই) মাস অন্তর্ভুক্তকরণ [প্রেষণ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৮(ক)];
চ. প্রিভেনটিভ ও স্যোশাল মেডিসিন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ‘এমএসসি ইন ফিল্ড এপিডেমিওলজি’ বিষয়টির নাম পরিবর্তন করে ‘এমএসসি ইন এপ্লাইড এপিডেমিওলজি’ নামকরণ (প্রেষণ নীতিমালার পরিশিষ্ট-‘ক’);
ছ. ‘রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং’ এর পাশাপাশি মেডিকেল রেডিও ডায়াগোনসিস’ নাম প্রেষণ নীতিমালার পরিশিষ্ট-‘ক’ তে অন্তর্ভুক্তকরণ;
জ. ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে পদায়নকৃত চিকিৎসকদের উপজেলা পর্যায়ে চাকরিকাল বিবেচনা;
ঝ. সরকারি চিকিৎসক সরকারি চাকরির পূর্বে বেসরকারি শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোর্সের আংশিক সম্পন্ন করে থাকলে তার কোর্সের অবশিষ্ট অংশ একই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করার জন্য প্রেষণ [প্রেষণ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৮(ট)];
ঞ. জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের প্রেষণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে তাদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে জটিলতার বিষয়ে আলোচনা [প্রেষণ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৬(খ)];
ট. প্রেষণ সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে প্রেষণ আবেদন গ্রহণ ও মঞ্জুর।
Discussion about this post