প্রফেসর ডা: এম এ শাকুর
আমাদের শরীরের পুরো শক্ত কাঠামো খনিজ পদার্থের দ্বারা গঠিত। এই শক্ত কাঠামোর প্রতিটি ইউনিট হলো হাড়। মানুষের শরীরের কাঠামো ২০৬টি হাড়ের মাধ্যমে তৈরি। হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজন হলো প্রধানত ক্যালসিয়াম ও ফসফেট। হাড়, জোড়া ও মাংসপেশি ইত্যাদি মিলে পূর্ণাঙ্গ মানবদেহ গঠিত হয়। হাড় ও জোড়াগুলো একটি নির্দিষ্ট দিকে ও নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করতে পারে। এই নির্দিষ্ট নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলেই হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে।
কেন হাড় ভেঙ্গে?
– সাধারণত বড় ধরনের আঘাতের কারণে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। যেমন- গাছ থেকে পড়ে যাওয়া, এটা সাধারণত ছোট ডানপিটে ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়। আর আমের মওসুমে এমনটি খুবই স্বাভাবিক। মগডালে পাকা আম পাড়তে গিয়ে অনেকেই হাত-পায়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলে।
– আছাড় খেয়ে পড়ে গেলে
– রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে
– মারামারি করার কারণে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে
– হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে
– হাড়ের মধ্যে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলে
– কিছু কিছু রোগ যেমন- অস্টিওপরোসিস, বোন ক্যান্সার ইত্যাদির কারণে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে।
প্রকারভেদ
সাধারণত দুইভাবে হাড় ভাঙ্গতে পারে। যথা :
– ক্লোজড ফ্রাকচার : এ ক্ষেত্রে হাড় ভেঙ্গে গেলেও তা চামড়া ভেদ করে উঠতে পারে না, অর্থাৎ কোনো রক্ত বের হয় না।
– ওপেন ফ্রাকচার : এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হাড়টি ভেঙ্গে গিয়ে তা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে, অর্থাৎ এখানে রক্ত বের হওয়া অনিবার্য।
হাড় ভাঙ্গলে যে উপসর্গ দেখা যাবে :
– ভাঙ্গা স্থানে ব্যথা হয়
– আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যায়
– আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে যায়
– অঙ্গটির স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট হয়ে যায়
– আক্রান্ত স্থানটি ধরলে রোগী খুব ব্যথা অনুভব করে।
– হাত বা পা ভাঙ্গলে অনেক সময় ভাঙ্গা অংশের নিচে নাড়ির স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়
– ভাঙ্গা অংশটি নাড়ালে এক ধরনের শব্দ অনুভূত হয়।
– আক্রান্ত স্থানটি থেকে রক্ত বের হওয়া, এমনকি রক্ত বের হওয়ার জন্য রোগী শকে চলে যেতে পারে।
হাড় ভাঙ্গার পর সাথে সাথে কী করবেন?
– যদি Close Fracture হয়, অর্থাৎ রক্ত যদি বের না হয় তবে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে RICEN থেরাপি বহুলপ্রচলিত। তা হলো R=Rest. আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখতে হবে। I=Ice therapy বা বরফ লাগাতে হবে। C=crape bandage দিয়ে নড়াচড়া বন্ধ করানো। E= Elevation অর্থাৎ আক্রান্ত অঙ্গটি একটু উঁচুতে রাখতে হবে। যাতে অঙ্গটি হৃৎপিণ্ড থেকে ওপরে থাকে। N= NS AID দিতে হবে, অর্থাৎ বেদনানাশক ওষুধ দিতে হবে।
– এরপর কাছাকাছি কোনো ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে অর্থোপেডিক ডাক্তারের কাছে পাঠাবেন। তিনি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্লাস্টার করবেন বা প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবেন।
Open Fracture-এর ক্ষেত্রে রোগীর রক্ত বন্ধ করার জন্য
– ভাঙ্গা অংশের ওপরের দিক একটি রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং ভাঙ্গা অংশ সুন্দরভাবে আবৃত করে বেঁধে দিতে হবে।
– ভাঙ্গা স্থানে ঠাণ্ডা বা বরফ দেয়া যেতে পারে।
– তবে যতশিগগির সম্ভব অর্থোপেডিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত অপারেশন করার দরকার হয়। ব্যথানাশক ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক, অর্থাৎ জীবাণুনাশক ওষুধেরও প্রয়োজন।
অপারেশন করার পর বা প্লাস্টার করার পর কী করবেন?
প্লাস্টার করার পর আক্রান্ত অঙ্গ সাধারণত ফুলে যায়। এই ফোলা কমানোর জন্য অঙ্গকে একটু উঁচুতে রাখতে হবে।
– প্লাস্টার করা অংশের ওপরের জোড়া ও নিচের জোড়াকে রোগী নিজে নিজে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নাড়াবেন বা প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করবেন। এতে ফোলা কমে যাবে এবং রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে। হাত ও পায়ের যেকোনো হাড় ভেঙ্গে গেলে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। তা না হলে ভাঙ্গা অংশের কাছাকাছি জোড়া শক্ত হতে পারে।
প্লাস্টার খোলার পর কী করবেন?
– প্লাস্টার খোলার পর প্রথমত দেখতে হবে ভাঙ্গা হাড় ঠিকমতো জোড়া লাগছে কি না। জোড়া না লাগলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
– জোড়া লাগলে দেখতে হবে কোনো মাংসপেশি শুকিয়েছে কি না। শুকিয়ে গেলে ওই মাংসপেশির জন্য নির্ধারিত ব্যায়াম করতে হবে।
– কোনো জোড়া শক্ত হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল থেরাপি গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। নতুবা রোগী পঙ্গু হতে পারে।
Discussion about this post