হার্টবিট ডেস্ক
বাদাম খেলেই ওজন বাড়ে, এমন ধারণা একদমই ভুল। আকারে ছোট হলেও বাদাম বিভিন্ন খনিজ এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।যা শীতকালে মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলে। মোট কথা বিভিন্ন বাদাম হলো সুস্বাস্থ্যের বন্ধু।
কাঠ বাদাম
কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’, ‘এ’, ‘বি-১’, ‘বি ৬’, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে। যা আমাদের চুল ও ত্বক দুইটার জন্যই ভালো। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও এনার্জি বুস্ট আপ করে কাঠ বাদাম।
আখরোট
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ আখরোট আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট রয়েছে যা ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক মাত্রায় বজায় রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাবার যেমন- সালাদ, কেক, কুকিস বা বিকেলের স্ন্যাক্সের মধ্যে আখরোট রাখুন।
কাজু বাদাম
কাজু বাদাম খেলে ওজন বাড়ে সঠিক। কিন্তু প্রত্যেক দিন পরিমিত মাত্রায় খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণেই থাকে। শীতকালে দিনে দু-তিনটি কাজুবাদাম খাওয়া খুবই ভালো। শরীর গরম থাকার পাশাপাশি কাজ করার এনার্জি বেড়ে যায়। তবে, কাজু বরফি এড়িয়ে চলুন বরং সুজি, চিড়ের পোলাও বা পায়েস রান্নায় কাজু বাদাম দিতে পারেন।
চিনা বাদাম
চিনা বাদাম আমাদের সবারই পছন্দের একটি খাবার। এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস, খনিজ ও ভিটামিনগুলো সঠিক মাত্রায় থাকায় কার্ডিওভাসকুলার, কোলেস্টেরল এমনকি ক্যানসারের মতন কঠিন রোগগুলো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শীতের মৌসুমে অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে পিনাট বাটার দিয়ে খেতে ভালবাসেন।
পেস্তা বাদাম
অন্যান্য বাদামগুলোর তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেক। পেস্তা বাদাম খেতে খুবই সুস্বাদু। তাই পায়েস, অথবা কোনও মিষ্টির ওপরে গার্নিশ করতে পেস্তার ব্যবহার হামেশাই চোখে পড়ে। এটি ওজন হ্রাস, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
বাদাম খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা জেনে নিই-
হার্টের স্বাস্থ্য
কাজু বাদামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যানসার এবং হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কাজু বাদামে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা মানবদেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (এলডিএল) পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেকাংশে।
ওজন কমাতে
ডায়েট না করে নিয়মিত বাদাম খেলে ওজন দ্রুত হ্রাস করে। কাজু বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়। কাজু বাদামে ভিটামিন ‘কে’ আছে, যা হাড়ের জন্য উপকারী। এছাড়া অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
চোখ ভালো রাখে
অত্যধিক দূষণের সঙ্গে মিলিত শহর পরিবেশে, আমাদের চোখ প্রায়শই বিভিন্ন সংক্রমণে ভোগে। কাজু বাদামে জিয়াজেনথিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রঞ্জক রয়েছে যা চোখের রেটিনাতে একটি আবরণ তৈরি করে ধুলাবালি ও আলোক রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।
ত্বকের যত্নে
কাজু বাদামের তেল ত্বকের জন্য আশ্চর্য রূপে কাজ করে। কাজু বাদামের তেল সেলেনিয়াম, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। এছাড়াও তারা ফাইটোকেমিক্যালস, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর দুর্দান্ত উৎস। কাজু বাদামে উপস্থিত সেলেনিয়াম ত্বকের পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
রক্তরোগ প্রতিরোধে
নিয়মিত এবং সীমিত উপায়ে কাজু খাওয়া রক্তের রোগ এড়াতে সহায়তা করতে পারে। কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে তামা রয়েছে, যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যাল নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে কপারের অভাব হলে লৌহ স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করে। কাজু বাদাম খেলে সমস্যা দূর হয়।
স্বাস্থ্যকর চুল
কাজু বাদাম স্বাস্থ্যগুণের পাশাপাশি কাজু তেল মাথার ত্বকে প্রয়োগে স্বাস্থ্যকর চুল পেতে সাহায্য করে। কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের অন্দরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের রঙকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
কাজু বাদামে আছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মানবদেহে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কাজ করে। একইসঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতাও বাড়ায়। তাই আজ থেকেই বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
Discussion about this post