হার্টবিট ডেস্ক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাড়ে চার ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পরও আলাদা করা যায়নি জন্মের পর থেকে জোড়া লাগা দুই বোন লাবিবা ও লামিসাকে। চিকিৎসকরা ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
সোমবার সকাল আটটা থেকে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আশরাফ-উল-হকের নেতৃত্বে ৪০ জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। ১২ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করার পরিকল্পনা থাকলেও সাড়ে চার ঘণ্টা পর চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার শেষ করেছেন।
অস্ত্রোপচার শেষে আজ দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের এ কথা জানান হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল।
তিনি বলেন, আজ আমরা প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করেছি। মূল অপারেশনে যেতে আরেকটু সময় দরকার। আজ মূল ধাপের অপারেশন শুরু করলে শিশু দুটিকে বিচ্ছিন্ন করার পর লামিসার কিছু জটিলতার আশংকা ছিল। সেক্ষেত্রে নারী হিসাবে তার পূর্ণতা পেতে সমস্যা হতো। আশা করি শিশু দুটির যোনিদ্বার কোনো ইনজুরি ছাড়াই আমরা পৃথক করতে পারব। যোনিদ্বার পৃথক করার ৬-৮ সপ্তাহ পর মূল অপারেশন করা হবে। সেই পর্যন্ত লাবিবা-লামিসা আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।
তারা জানান, শিশু দুটিকে এখনই আলাদা করা সম্ভব হবে না। তাদের প্রজনন অঙ্গ ও মলদ্বার খুব কাছাকাছি থাকায় একটি শিশুর শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকরা জানান, দুই শিশুর শরীরে ত্বকের নিচে বিশেষ টিস্যু সম্প্রসারণ বল বসানো হয়েছে। সাত থেকে আট সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর নিখুঁতভাবে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে।
আশরাফ-উল-হক জানান, দুটি শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে তাদের শরীরে ত্বকের নিচে টিস্যু সম্প্রসারণ বল (টিস্যু এক্সটেইনডার বল) বসানো হয়েছে। টিস্যু সম্প্রসারণ বল বিশেষ ধরনের সিলিকন বল। স্যালাইন পুশ করে এ বল বড় করা হবে। এটি শিশুদের ত্বকের সম্প্রসারণের কাজ করবে। এতে যোনিদ্বার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, এটি একটি ক্রিটিক্যাল অপারেশন। আমাদের অনেক চিন্তা-ভাবনার বিষয় আছে। আমাদের এমনভাবে অপারেশন করতে হবে যেন তাদের অপারেশন-পরবর্তী কোনো ঝুঁকি না থাকে এবং অপারেশনের পর তারা স্বাভাবিক জীনবযাপন করতে পারে। আমরা সময় নিচ্ছি যাতে সর্বনিম্ন ঝুঁকিতে সর্বোচ্চ সফলতার সম্ভাবনা থাকে।
২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করে লাবিবা ও লামিসা। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রির সহকারী লাল মিয়া ও মনুফা আক্তার দম্পতির সন্তান তারা।
জন্মের ৯ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাদের মা-বাবা। চিকিৎসকদের পরামর্শে চলছিল তাদের চিকিৎসার কার্যক্রম। গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয় তাদের। তাদের পায়ুপথ, প্রজনন অঙ্গ ও মেরুদণ্ডে জোড়া রয়েছে।
এ সময় ঢামেক নিউরোসার্জারির কনফারেন্স রুমে আরও উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার আইয়ুব আলী, পেডিয়েট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আইয়ুব আলী সরকার ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিধান সরকারসহ অন্যান্য চিকিৎসারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৭ সালে জোড়া লাগানো শিশু তোফা-তহুরা ও ২০১৯ সালে রাবেয়া-রোকাইয়াকে আলাদা করা হয়।
Discussion about this post