অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ,
বুকের মধ্যে টিউমার নানা স্থানে হতে পারে। যেমন- ব্রংকাস, ফুসফুস, দুটি ফুসফুসের মাঝের অংশ বা মিডিয়াস্টিনাম প্রভৃতি স্থানে ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সার প্রত্যক্ষভাবে হয়। আবার স্তন, কিডনি, জরায়ু, ওভারি, টেসটিস, থাইরয়েড প্রভৃতির ক্যান্সার থেকে ফুসফুসে ছড়িয়ে আসতে পারে।
ব্রংকাসের ক্যান্সার : ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্র হিসাবে দেখা গেছে যে, ব্রংকাসের ক্যান্সার শতকরা ৪০ ভাগ পুরুষের হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি কম হয়। পুরুষের প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ পরিমাণ শ্বাসনালির ক্যান্সার হতে পারে মহিলাদের ক্ষেত্রে। এটি আবার ৪৫ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। শ্বাসনালির ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ ধূমপান করা এবং যে যত বেশি সিগারেট খান তার তত বেশি রোগের প্রবণতা বেশি।জটিল উপসর্গ : ফুসফুস থেকে দেহের বিভিন্ন স্থানে এভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঠিকমত সার্জিক্যাল চিকিৎসা প্রভৃতি দ্রুত না হলে এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে।
লক্ষণ : প্রথম আক্রমণকালে রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়। কাশি হলো একটি সাধারণ লক্ষণ। এছাড়া অন্য লক্ষণ বিশেষ বোঝা যায় না। * জীবাণু সংক্রমণের পরিমাপের ওপর কফের চরিত্র নির্ভর করে। * তারপর সামান্য রক্ত উঠতে দেখা যায় কফের সঙ্গে। * ফুসফুসের কোনো খণ্ডে কোলাপস হলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির ভাব প্রভৃতি প্রকাশ পায়। অনেক সময় রোগী ক্রনিক ব্রংকাইটিসে আগে থেকে ভুগলে এটি দেরিতে দেখা যায়। * অনেক সময় নিউমোনিয়ার লক্ষণ এবং ফুসফুসের পর্দা বা প্লুরাতে ব্যথা অনুভব করা যেতে পারে। * প্লুরাতে টিউমারের আক্রমণ ঘটলে প্লুরার এই পর্দায় পানি জমে এবং তার সঙ্গে প্রচুর রক্ত মিশ্রিত থাকে। * অনেক সময় পরবর্তীকালে হাতেও ব্যথা দেখা দেয়। কারণ, ইন্টারকোস্টাল নার্ভ বা স্নায়ু এবং ব্র্যাকিয়াল প্লেক্সাস আক্রান্ত হয় বলে এটি হয়। অনেক সময় কোনো কোনো বুকের হাড় নষ্ট হতে পারে এ থেকে। * পরবর্তীকালে রোগ বাড়লে রোগীর মনের পরিবর্তন, প্রস্রাবে রক্ত, চর্মে নডিউল দেখা দিতে পারে। এছাড়া স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে দেহের নানা স্থানের স্নায়ুবিক অক্ষমতা ও তার জন্য বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
বুকের চিহ্ন এবং লক্ষণাদি : প্রথম অবস্থায় বুকে কোনো লক্ষণ দেখা বা বোঝা যায় না। এটি ব্রংকাইটিস বলে মনে হতে পারে প্রায় ক্ষেত্রেই। * ব্রংকাসে বাধার সৃষ্টি হলে তখন পালমোনারি কোলান্সের লক্ষণাদি চোখে পড়ে। * টিউমার খুব বড় হলে তখন প্লুরাল ইফিউশন দেখা দেয়। * প্লুরাতে ছড়িয়ে পড়লে ড্রাই বা শুকনা অথবা ইফিউশনযুক্ত প্লুরিসি দেখা যায়।
রোগ নির্ণয় : এক্সরে : এ পরীক্ষা করলে বিভিন্ন অবস্থায় ভেদ অনুযায়ী নানা লক্ষণাদি দেখা যায়। * কোন অংশের ঘন, গাঢ় ওপাসিটি বা দাগ দেখা দিতে পারে। * ফুসফুসের দাগের সঙ্গে ছোট ছোট গর্ত দেখা দিতে পারে। * ফুসফুসের বিরাট অংশ বা একটি গোটা ফুসফুস চুপসে গেলে বড় অংশজুড়ে এটি দেখা দেয়। * অনেক সময় ফুসফুসের পর্দায় পানি জমতে পারে, যাকে প্লুরাল ইফিউশন বলে।
ব্রংকোসকোপি : এর দ্বারা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুসের টিস্যু কিছুটা বের করে এনে হিস্টোলজিকাল পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। এর সাহায্যে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। মাঝবয়সী এবং বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
চিকিৎসা : অপারেশন পদ্ধতির দ্বারা বক্ষ সার্জন দিয়ে ফুসফুস বা তার একটি খণ্ড কেটে বাদ দিতে হয়। প্রথম অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে এরূপ করা সম্ভব হয়। এভাবে দ্রুত চিকিৎসা করা হলে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ রোগী ৫ বছর বা তার বেশিও বেঁচে থাকতে পারে। * খুব ছোট টিউমার সবেমাত্র শুরু হলে ডিপ এক্সরে দিয়ে সারানো সম্ভব হয়। তবে অনেক সময় আবার তা শুরু হয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে জটিল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় কোমোথেরাপি দিয়ে তারপর ডিপ এক্সরে চিকিৎসা করা হয়। তাতে অনেকটা ভালো হয়, যদি টিউমার ছোট হয় এবং প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে।
বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড হাসপাতাল
ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৫৯১৯৬৬৪।
Discussion about this post