হার্টবিট ডেস্ক
গত একবছরে দেশে ৭২ ৯ জন এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা । গত একবছরে এইডসের আক্রান্ত হয়ে ২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার ( ১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিসিপিএস মিলনায়তনে বিশ্ব এইডস দিবস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক এ তথ্য জানান।
এইডস এর সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই এবারের বিশ্ব এইডস দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এবারে এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারী হবে শেষ’।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নতুন করে ৭২৯ জন এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগোষ্ঠী (রোহিঙ্গা) ১৮৮ জন। গত এক বছরে এইডস আক্রান্ত ২০৫ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ সংক্রমণ কিছুটা বেশি। দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার।
১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট আট হাজার ৭৬১ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে এবং মোট মারা গেছেন এক হাজার ৫৮৮ জন। গত এক বছরে মোট ছয় লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের এইচআইভি টেস্ট হয়েছে। এ ছাড়া, ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আরও ছয় লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের।
গত ১ বছরে শনাক্ত নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠী ১৮৬ জন (২৬ শতাংশ), রোহিঙ্গা ১৮৮ জন (২৬ শতাংশ), বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন (২০ শতাংশ), ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন (৮ শতাংশ), নারী যৌনকর্মী ১৭ জন (২ শতাংশ), সমকামী ৬৭ জন (৯ শতাংশ), পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন (৭ শতাংশ), তৃতীয় লিঙ্গ ১৩ জন (২ শতাংশ)।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসা সেবার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এছাড়া, দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনও ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করতে পারেন। বাংলাদেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। এদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আছেন।
শিশুদের এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ (পিএমটিসিটি) কার্যক্রম ১৩টি সরকারি হাসপাতালে চালু আছে। পিএমটিসিটি কার্যক্রমের আওতায় গত ১ বছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৯ জনের এইচআইভি টেস্ট হয়েছে। ১ বছর ২১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে ১ বছরে ৭২ জন পিএমটিসিটি সেবা নিচ্ছেন। এআরটি নিচ্ছেন ৭২ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী। গত ১ বছরে ৫৩ জন সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এই ৫৩ জনের মধ্যে ৪৩ জন শিশু এইচআইভি নেগেটিভ। বাকি শিশুদের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এইডস রোগের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার অন্যান্য রোগের মতো এইডসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। দেশের ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে সরকারি এই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। করোনার এই সংকটকালেও সরকার এইডস রোগীদের পরীক্ষা কার্যক্রম ও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে। নিকট ভবিষ্যতেই এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল সম্প্রসারণ করা হবে।
Discussion about this post