আপনার পায়ের যত্ন নিন
ডায়াবেটিসযুক্ত মানুষের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগগুলোর একটি হলো পায়ের সুষ্ঠু যত্ন নেয়া। ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট স্নায়ুর ক্ষতি পায়ের অনুভূতিহানির (অবসতা) সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে আঘাত পাওয়া অনুভূব করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে দেহে বিদ্যমান ক্ষতগুলো শুকানোও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে, তাই সহজেই সংক্রামণ হতে পারে। পায়ে ছত্রাকের আক্রমণের (ত্বকের সমস্যা, সংকলিত হচ্ছে দেখুন) ফলেও সংক্রামণ হতে পারে।
চিকিৎসা করা না হলে পায়ের পাতার একটি সংক্রামণ পুরো পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পা’টি এতটাই সংক্রামিত হয়ে পড়তে পারে যে এটিকে হয়তো বাদ দিয়ে দিতে (কেটে ফেলতে) হতে পারে। কিন্তু পায়ের ভাল যত্ন এবং আপনার রক্তে চিনির মাত্রা ভালভাবে সামলানোর মাধ্যমে পা কেটে ফেলা রোধ করা যেতে পারে।
প্রতিদিন আপনার পা পরীক্ষা করুন
আপনি যদি অনুভবই করতে না পারেন তবে আপনি যে একটি আঘাত পেয়েছেন তা বোঝা কঠিন। সুতরাং আপনি যদি মনে করেন যে আপনার পায়ে একটি অংশ অবশ হয়ে আসছে, তবে প্রতিদিন দেখা ও স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনার পা পরীক্ষা করুন। আপনি যদি নিজে তা করতে না পারেন তবে কাউকে বলুন আপনাকে সাহায্য করতে। কোন কোন ব্যক্তি তাদের পায়ের তলা দেখার জন্য আয়না ব্যবহার করে থাকে। দেখুন সেখানে কোন ফোস্কা, লালচে ভাব, কাটা, বা ঘা আছে কিনা। দেখুন কোন উষ্ণ বা ফোলা জায়গা আছে কিনা, সেগুলো হয়তো সংক্রামণের প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে। পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাঝে কোন সমস্যা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
কোন ক্ষত যদি না শুকায় বা কোন জায়গা লাল, উষ্ণ, বা ফোলা থেকে যায় তবে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করুন। মারাত্মক জটিলতা এড়াতে শুরুতেই ক্ষতের চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
পায়ের ক্ষতের পরিচর্যা করুন
ক্ষত এলাকা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। পায়ের উপর না দাঁড়ানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করুন। ক্ষতের উপর চাপ হ্রাস করতে হাঁটার সময়ে ক্র্যাচ ব্যবহার করুন।
পরিষ্কার জল বা একটি জীবাণুনাশক দ্বারা ক্ষত জায়গা পরিষ্কার করুন। কোন শুকানো অংশ থাকলে তা তুলে ফেলুন। (শুকানো অংশগুলো স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে এবং এর রং হবে গাঢ়।) উষ্ণ (গরম নয়) জলে আপনার পা ভিজিয়ে রাখা শুকানো অংশগুলো অপসরণ করায় সাহায্য করতে পারে। একটি জীবাণুনাশক মলম প্রয়োগ করুন এবং একটি গজ বা একটি পরিষ্কার, নরম কাপড় দিয়ে ক্ষতটিকে ঢেকে দিন। তারপর এর উপর আর একটি নরম কাপড় দিয়ে প্যাড দিয়ে দিন।
ফুলে যাওয়া, শক্ত হয়ে যাওয়া, উষ্ণতা, বা ক্ষত থেকে লাল রংয়ের রেখা উপরে উঠে যাওয়া জাতীয় সংক্রামণের চিহ্নগুলো লক্ষ্য করুন। সংক্রামণগুলোকে নিরাময় করতে টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন, পেনিসিলিন, বা মেট্রোনিডাজল (সংকলিত হচ্ছে). জাতীয় জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
স্ব-পরিচর্যা ও বিশ্রামে যদি ক্ষত যদি শুকায় তাহলে চিকিৎসা সাহায্য গ্রহণ করুন।
পায়ের আঘাত পাওয়া রোধ করুন
ঘরের ভিতরে থাকলেও জুতো বা চপ্পল পরুন। আপনি হয়তো কোন ধারালো জিনিষের উপর পা দিয়ে ফেলতে পারেন কিন্তু তারপরও তা অনুভব নাও করতে পারে।
প্রতিদিন পা ধুয়ে পরিষ্কার করুন এবং গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চাপড়ে শুকান। দু’ আঙ্গুলের মাঝখানে যেন শুকায় তার সবসময়েই লক্ষ্য রাখুন।
জুতো পড়ার আগে প্রথমেই জুতোর ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেখে নিন যে এর ভিতরে কোন ধারালো বা অমসৃণ কোন জিনিষ আছে কিনা। কোন অমসৃণ জিনিষ থাকলে সেটিকে হয় নমনীয় বস্তু দিয়ে ঢেকে দিন বা কেটে ফেলুন।
পায়ের আঙুলের নখ রাখুন যত্নে
ভিতরের দিকে বৃদ্ধি পাওয়া একটি পায়ের আঙুলের নখ ভেদ করে সংক্রামণের সৃষ্টি করতে পারে। একটি নখ যদি ভিতরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে একটু তুলা ভিজিয়ে নখের কোণার নীচে দিয়ে রাখুন যাতে এটি উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে। পায়ের আঙুলে যাতে কোন আঘাত না লাগে সেবিষয়ে সতর্ক থেকে সোজাসুজি একপাশ থেকে আর এক পাশে নখ কাটুন। এগুলোকে বাঁকিয়ে কাটার পরিবর্তে সোজা ভাবে কাটালে এগুলোর ভিতরের দিকে বৃদ্ধি পাওয়া রোধ করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস সামলাতে ভাল ভাল খাবার খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ রোধ করতেও সাহায্য করবে। খাবারে স্বল্প পরিমাণে লবন খাওয়া রক্ত চাপকে একটি ভাল মাত্রায় রাখতে সাহায্য করবে।
রক্ত চাপ পরীক্ষা করুন
ডায়াবেটিস রোগীদের সকলেরই উচ্চ রক্ত চাপের পরীক্ষা করা উচিত এবং উচ্চ রক্তচাপযুক্ত সকলেরেই ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিসের মতোই উচ্চ রক্তচাপও হৃদপিণ্ড, রক্ত নালী, বৃক্ক, এবং দেহের অন্যান্য অংশেরও ক্ষতি করে। সুতরাং শুধু ডায়াবেটিস বা শুধু উচ্চ রক্তচাপের পরিবর্তে আপনার যদি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ উভয় সমস্যাই থেকে থাকে তবে আপনার হৃদরোগ, স্ট্রোক, বৃক্কের রোগ, বা অন্যান্য মারাত্মক সমস্যা হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী হবে।
একটি সাধারণ রক্তচাপ ১৪০/৯০ এমএমএইচজি এর নীচে থাকে (হৃদরোগ).। যদি রক্ত চাপ অনেক বেশী থাকে তাবে শারীরিক কসরত করে, চাপ কমিয়ে এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে একে নামাবার চেষ্টা করুন। এই একই পরিবর্তন ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপ উভয়ের ক্ষেত্রেই সাহায্য করবে।
এসিই ইনহিবিটর নামের একটি ঔষধ রক্তচাপ কমায় এবং বৃক্কের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। স্টাটিন নামের অন্য আর একটি শ্রেণীর ঔষধ রক্তে মধ্যে কোলেষ্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের সমস্যা বা স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা কমায়। রক্তচাপ কমায় এমন ঔষধ ও কোলেষ্টেরলের ঔষধের বিষয়ে আরও জানতে হৃদরোগ দেখুন।
ধূমপান বন্ধ করুন
যারা ধূমপান করে তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেশী, এবং ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তি যারা ধূমপান করে তাদের যারা ধূমপান করেনা তাদের থেকে বেশী মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। তামাকের ধূমপান করলে তা শুধুমাত্র ফুসফুসেরই ক্ষতি করেনা বরং দেহের অনেক অংশেরই ক্ষতি করে। এর ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় ও রক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। ধূমপান ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এতো বেশী ক্ষতিকর যে আপনার রক্তের চিনির মাত্রা কমাবার চেয়ে ধূমপান বন্ধ করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
দৃষ্টি
রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস ঝাপসা দৃষ্টির সৃষ্টি করতে পারে। এটি পরে যখন রক্তে চিনির মাত্রা আবার স্বাভাবিক হবে তখন আবার ঠিক হয়ে যাবে। যা হোক ডায়াবেটিস কিন্তু আপনার চোখের রক্ত নালীর আরও বেশী দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে দৃষ্টি হারানো বা অন্ধত্বের মতো সমস্যাও তৈরী করতে পারে। ডায়াবেটিসযুক্ত একজন ব্যক্তির বছরে একবার বা যদি তাদের ইতোমধ্যেই চোখে ক্ষতি হয়ে থাকে তবে বছরে বেশ কবার তাদের চোখ পরীক্ষা করা উচিত। চোখের রক্ত নালীর ক্ষতি যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে, তবে একজন চোখ বিশেষজ্ঞ তার চিকিৎসা করতে পারে যাতে দৃষ্টি হারানো রোধ করা যায়।
মুখের পরিচর্যা
ডায়াবেটিস মাঢীর সংক্রামণের প্রচুর ক্ষতি করে, এবং পরিণতিতে এটি ডায়াবেটিসকে আরও খারাপ করে তোলে। ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের কমপক্ষে দিনে দু’বার দাঁতের ব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত দাঁতের পেষ্ট বা দাঁতন (মেসওয়াক, নীমের ডাল) দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। যদি দাঁতের খিলাল বা ফ্লস পাওয়া যায় তবে এগুলো দিয়ে দাঁতের ফাঁকে পরিষ্কার করুন।
ডায়াবেটিসযুক্ত একজন ব্যক্তি দাঁতের ডাক্তার দেখালে উপকার পাবে। আপনার যে ডায়াবেটিস আছে কিনা তা সবসময় আপনার দাঁতের ডাক্তারকে জানানো উচিত।
Discussion about this post