হার্টবিট ডেস্ক
রক্ত বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করা যায়। রক্ত পরীক্ষাতেই বেশী সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
কার পরীক্ষা করা উচিত?
যদি একজন ব্যক্তির নীচের লক্ষণগুলো দেখা যায় তবে তার ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা উচিত:
- ডায়াবেটিসের চিহ্ন বিদ্যমান।
- পরিবারে একজন আছে যার ডায়াবেটিস আছে।
- যার কটিরেখা অনেক বড় এবং বয়স ৪০-এর উপর।
- যার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে
- যার খুবই বড় আকারের একটি শিশু জন্মেছে (৪ কেজি বা ৯ পাউন্ডের উপর)।
- যে এখনো তরুণ এবং যার ধরন ১ ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য লক্ষণ দেখা দিয়েছে
রক্ত পরীক্ষা
রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করার মাধ্যমে সকল ধরনের ডায়াবেটিস সনাক্ত করা যায়। ডায়াবেটিস সনাক্ত করতে স্বাস্থ্য কর্মী হয়তো একটির বেশী ধরনের পরীক্ষা করতে পারে বা একটি পরীক্ষা পুনরায় করতে পারে। আপনি আপনার খাদ্যাভ্যাস, কর্মকাণ্ড, বা ঔষধে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে কিভাবে ফলাফলের পরিবর্তন হচ্ছে তা দেখায় আপনাকে সাহায্য করার মাধ্যমে ডায়াবেটিস সামলাতেও পরীক্ষার ব্যবহার করা যেতে পারে।
একজন ব্যক্তির রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক আছে কিনা, একটু বেশী মাত্রায় আছে কিনা, বা তার ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরিমাপ করতে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। যদি রক্তে চিনির মাত্রা বেশী থাকে কিন্তু ডায়াবেটিসের হওয়ার মতো অতো বেশী না তবে একজন ব্যক্তি ভাল ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ও আরও বেশী করে শরীরচর্চা করার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া রোধ করতে পারে।
ডায়াবেটিসের জন্য ২ সাধারণ রক্ত পরীক্ষা রয়েছে। একটিকে বলা হয় উপবাস থেকে রক্তে চিনি পরীক্ষা আর অন্যটির নাম এওয়ানসি পরীক্ষা।
উপবাস থেকে রক্তে চিনি (এফবিএস বা এফপিজি) সবথেকে সাধারণ একটি পরীক্ষা। সকালে কোন কিছু খাওয়ার আগেই এই পরীক্ষাটি করা হয়। কোন কোন ক্লিনিকে রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করা হয় গ্লুকোমিটার নামের একটি যন্ত্র দ্বারা যেটি আঙ্গুলের মাথা থেকে নেয়া এক ফোটা রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। অথবা ক্লিনিকটি একটি সিরিঞ্জে রক্ত নিয়ে একটি পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারে। উপবাস থেকে রক্তে চিনি পরীক্ষা আপনার দেশে ব্যবহৃত পরিমাপ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি এমএমওএল/এল (প্রতি লিটারে মিলিমোল)-এ পরিমাপ করা হয় তবে এর ফলাফল হবে ৪ থেকে ২০-এর মধ্যে কোন সংখ্যা। যদি আপনার ৬.৯ এমএমওএল/এল অথবা বেশী হয় তবে আপনার ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস হয়ে থাকতে পারে। যদি আপনার দেশে এমজি/ডিএল (প্রতি ডেসিলিটারে মিলিগ্রাম)-এ পরিমাপ করা হয়ে থাকে তবে, ফলাফলটি হবে ৮০ থেকে ৩৫০এর মধ্যে কোন সংখ্যা। এই হিসেবে ১২৫ এমজি/ডিএল বা বেশী হলে ডায়াবেটিস হতে পারে।
৫.৬ এমএমওএল/এল বা ১০০ এমজি/ডিএল-এর থেকে কম: আপনার রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক আছে।
৫.৬ এমএমওএল/এল বা ১০০ এমজি/ডিএল থেকে বেশী কিন্তু ৬.৯ এমএমওএল/এল বা ১২৫ এমজি/ডিএল এর কম: এটি একটি সতর্কীবার্তা–এখন আপনার জীবনে একটি পরিবর্তন আপনার ডায়াবেটিস হওয়া রোধ করতে পারে। আপনি যদি উচ্চতর সংখ্যার কাছাকাছি থাকেন তবে স্বাস্থ্যকর খাওয়া ও শারীরিক কর্মকাণ্ড বা শরীর চর্চা করার অতিরিক্ত প্রচেষ্টা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৬.৯ এমএমওএল/এল বা ১২৫ এমজি/ডিএল: আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে এবং চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এই সংখ্যাটি যত উচ্চতর হবে ততই একজন ব্যক্তির রক্তে উচ্চমাত্রায় চিনির ফলে জরুরী অবস্থার সম্মুখীন হবার বা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী হবে।
এ১সি পরীক্ষার মাধ্যমে (গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা যাকে এইচবিএ১সি বা এইচজিনিএ১সি নামেও ডাকা হয়) একজন মানুষের রক্তে বিগত ৩ মাসের গড় চিনির মাত্রা দেখা হয়। এই পরীক্ষা করার জন্য একজন ব্যক্তির উপবাস করার প্রয়োজন নেই। একটি ক্লিনিক সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবে এবং তা একটি পরীক্ষাগারে পাঠাবে। এ১সি রক্ত পরীক্ষার ফলাফল সধারণতঃ শতাংশে (%) প্রকাশিত হবে এবং তা ৪% থেকে ১৪% মধ্যে হবে। এই ফলাফল যদি ৬.৪%-এর নিকটে হয়, বা তার থেকে বেশী হয় তবে ধরে নিতে হবে যে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। এই সংখ্যাটি যদি ৬.৪% এর সামান্য নীচে হয় তবে আপনি হয়তে বেশ কয়েকটি উপায়ে আপনার নিজের যত্ন নিতে চাইতে পারেন এবং পরবর্তীতে আবার ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করাতে পারেন।
৫.৭%-এর নীচে: আপনার রক্তে চিনির মাত্রার ঠিক আছে।
৫.৭%-এর বেশী কিন্তু ৬.৪%-এর কম: এটি একটি সতর্কীবার্তা–আপনার জীবনে পরবর্তন আনা আপনাকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনি যদি ৬.৪% এর নিকটে থাকেন তবে স্বাস্থ্যকর খাওয়া ও শারীরিক কর্মকাণ্ড বা শরীর চর্চা করার অতিরিক্ত প্রচেষ্টা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।৬.৪ থেকে বেশী: আপনার ডায়াবেটিস আছে এবং চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। সংখ্যাটি যত উচ্চতর হবে ততই ব্যক্তিটির রক্তে উচ্চমাত্রায় চিনির ফলে জরুরী অবস্থার সম্মুখীন হবার বা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী হবে।
মূত্র পরীক্ষা
মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে কিনা তা দেখা যেতে পারে। মূত্রে চিনি বিদ্যমান থাকলে মূত্র পরীক্ষার ফালিটি রং পরিবর্তন করে। ব্যক্তিটি মূত্রত্যাগ করার সাথে সাথেই পরীক্ষা করুন। এই পরীক্ষার জন্য ব্যক্তিটির উপবাস থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।
মূত্র পরীক্ষার ফলাফল কোন কোন ডায়াবেটিস সনাক্ত নাও করতে পারে কারণ মূত্রে চিনি বাহিত হয়ে আসার আগে চিনির মাত্রা বেড়ে যথেষ্ট উচ্চে (১০ এমএমওএল/এল বা ১৮০ এমজি/ডিএল) উঠতে হবে। সুতরাং মূত্র পরীক্ষায় যদি ডায়াবেটিস ধরা না পড়ে কিন্তু ডায়াবেটিস হবার অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায় তবে রক্ত পরীক্ষা করুন।
আমার যদি ডায়াবেটিস থাকে? | |
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়লে তা দুঃচিন্তাজনক হতে পারে। সহায়তা পাওয়ার বিভিন্ন উপায়ের জন্য অনেক মানুষের পক্ষ্যেই তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তা মেনে নেয়া কঠিন হয়। কেউই বিশ্বাস করতে চায় না যে তাদের এমন একটি অসুস্থ্যতা আছে যেটিকে সারা জীবন সামলিয়ে চলতে হবে। আপনি যদি অসুস্থ্য অনুভব না করেন তাহলে আপনি হয়তে বিশ্বাসই করবেন না যে আপনার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি অসুস্থ্য অনুভব নাও করেন রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি আপনার শরীরের ক্ষতি করবে। এটাই হলো খারাপ সংবাদ। কিন্তু সুসংবাদ হলো যে আপনি আপনার নিজের যত্ন নিয়ে এখনো একটি সুন্দর ও দীর্ঘ জীবন উপভোগ করতে পারেন। courtesy- hesperian health guide |
Discussion about this post