ডা. মো. জাহিদুর রহমান
গলায় খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যাকে ডিসফেজিয়া বলে। এই সমস্যাটি হয় কেন? এ বিষয়ে বলেছেন ডা. মো. জাহিদুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
গলায় খাবার আটকে যাওয়ার বিষয়টি ঘটে কেন?
ডিসফেজিয়া দুই কারণে হয়। একটি হলো ওরোফ্যারেনজিয়াল। আরেকটি হলো ইসোফেজিয়াল।
আমার যদি মস্তিষ্কে কোনো রোগ থাকে, যেমন, মস্তিষ্কে আঘাত হতে পারে, মস্তিষ্কের টিউমার হতে পারে অথবা মাথার পেছন থেকে যেখানে গলার অংশটি নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে যদি কোনো রোগ হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু আমাদের খাদ্যনালির যে নিয়ন্ত্রণ, সেটি থাকে না। তখন কিন্তু গলায় খাদ্য আটকে যায়। এটি হলো ওরোফ্যারেনজিয়াল ডিসফোজিয়া। আর আজকের মূল বিষয় হলো ইসোফ্যাজিয়াল ডিসফেজিয়া।
ধরুন, গলার মধ্যে কোথাও টিউমার বা ক্যানসার হয়েছে, তাহলেও আমাদের গলায় খাদ্য আটকে যাবে। আমাদের খাদ্যনালির যে একটি প্রবাহ একে নষ্ট করে। অর্থাৎ খাদ্যটা ঠিকমতো নিচের অংশে চলে যেতে পারছে না। প্যারিসসটালসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যটা ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসে। সেখানে যদি কোনো সমস্যা হয়, একে আমরা বলি ইসোফেজিয়াল মোটিলিটি ডিজঅর্ডার।
🔶 ডিসফেজিয়ার কিছু কারণসমূহ:
🔸মাথায়, ঘাড়ে আঘাত 🔸স্ট্রোক 🔸তালুকাটা 🔸ঔষধের পার্শ্ব প্রতি ক্রিয়া 🔸বার্ন ইনজুরি 🔸ক্যান্সার 🔸সার্জারী 🔸 শিশুর বিকাশ জনিত সমস্যা (সেরেব্রাল পলসি, ধীর বিকাশ এবং অন্যান্য) 🔸পোলিও ইত্যাদি।
এই সমস্যাটি কতটা গুরুতর?
যদি ধরেন কোনো প্রবীণ মানুষ আমাদের কাছে আসে, হয়তো সে পঞ্চাশ বা ষাটোর্ধ্ব, তখন কিন্তু বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিই। তার গলায় খাদ্য আটকে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই কোনো বড় ধরনের রোগ হয়েছে। যেমন তার গলার মধ্যে টিউমার বা ক্যানসার হয়েছে। তাই প্রবীণ মানুষকে আমাদের সেভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। রোগটা নির্ণয় করতে হবে। কী কারণে ডিসফেজিয়া হচ্ছে সেটি বের করতে হবে এবং অবশ্যই অতি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
আর আরেকটি হলো যদি কোনো তরুণ বয়সে হয়। ধরুন, একটি তরুণ মেয়ে আমার কাছে এসেছে। সে বলছে আমি ভালোই ছিলাম। তবে দুদিন ধরে খাবার আটকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে গলা ব্যথাও রয়েছে। তখন আমরা তার কাছ থেকে ইতিহাস নিই। অনেকে ব্রণের কারণে বা গাইনোকোলজিক্যাল কোনো কারণে ডকসিক্যাপ জাতীয় কোনো ওষুধ খেয়েছে, অথবা আয়রন, ক্যালসিয়াম জাতীয় কোনো ওষুধ খেয়েছে, সেই ক্ষেত্রে ওই ওষুধটি গলায় আলসার তৈরি করতে পারে। গলায় আলসার হলেও কিন্তু খাদ্য আটকে যাবে। সে হয়তো ক্যালসিয়াম জাতীয় কোনো ওষুধ খেয়েছে, সেই ক্ষেত্রে ওই ওষুধটি গলায় আলসার করতে পারে। গলায় আলসার হলেও তার খাদ্য আটকে যাবে।
যদি কারো ডিসফেজিয়া হয় বা এই যে গলায় খাবার আটকে যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা কী ?
যদি কারো দীর্ঘমেয়াদি গ্যাসট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স রোগ থাকে, তাহলে দেখা যায় এসিডজনিত কারণে কোনো একসময় ইসোফিজিয়াল স্ট্র্যাকচার অর্থাৎ খাদ্যনালির মাঝখানে জায়গাটা সরু হয়ে আসে। এতে খাবার আটকে যেতে পারে। আরেকটি হলো খাদ্যনালির নিচের অংশে, যাকে আমরা বলি বেরেট ইসোফেগাস। দীর্ঘদিন জিআরডির কারণে ব্যারেটস হবে, সেখান থেকেও তার ক্যানসার হতে পারে। সেখান থেকেও আমাদের ডিসফোজিয়া হতে পারে।
এরও চিকিৎসা হলো কারণটা বের করা। প্রথমে কারণের জন্য আমাদের অ্যান্ডোস্কোপি করতে হবে। করে আমাদের দেখতে হবে যে কারণটা কী? তার কি ব্যারেটস হয়েছে, না কি ক্যানসার হয়েছে, নাকি স্ট্র্যাকচার হয়েছে। পরবর্তীকালে আমাদের অবস্থা এরকম হবে। কারণ বুঝে এর চিকিৎসা করতে হবে।
ডিসফেজিয়ার সমস্যা পরীক্ষা
এখন সে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীই হোক বা তরুণ রোগীই হোক, দুজনকেই তো আমাকে কারণ বের করতে হবে। যেটা দিয়ে আমরা কারণ বের করি সেটি হলো, এন্ডোস্কোপিক আপার জিআইটি। অর্থাৎ আমরা গলার মধ্যে একটি নল দিয়ে পরীক্ষা করে দেখি। যদি সে প্রাপ্তবয়স্ক রোগী হয়, তাহলে আমাদের অ্যান্ডোস্কোপি করে দেখতে হবে যে তার টিউমার বা ক্যানসার হলো কি না। যদি টিউমার বা ক্যানসার পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা অ্যান্ডোস্কোপির মাধ্যমে সেখান থেকে বায়োপসি নিয়ে দেখব। অর্থাৎ একটু মাংস কেটে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখব যে কী ধরনের টিউমার বা কী ধরনের ক্যানসার।
আর যদি তরুণ বয়সে আলসার হয়, তাহলে আমাদের সেটি দেখতে হবে। কারণ বের করতে হবে, সেই মোতাবেক পরবর্তী চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজন হলে সেই কারণ দূর করতে হবে। যদি ওষুধের কারণে হয়, ওষুধ তাকে বন্ধ করতে হবে। যদি আলসার জানা যায় যে আলসার হয়েছে, সেটি নিরাময়ের জন্য আমাকে নতুন ওষুধ খেতে হবে।
Discussion about this post