হার্টবিট ডেস্ক
দেশে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে চার জেলায় করোনা সংক্রমণের হার শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও কমে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, সারাদেশের কোভিড ডেডিকেটেড ২১ হাজার ৮০০টি শয্যার মধ্যে ১৯ হাজার ৭৩০টি খালি পড়ে আছে।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক ‘কোভিড-১৯ ডাইনামিক ফ্যাসিলিটি ড্যাশবোর্ড ফর বাংলাদেশ’ ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সারাদেশে কোভিড ডেডিকেটেড মোট শয্যা রয়েছে ২১ হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে দুই হাজার ৭০ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোগী না থাকায় ১৯ হাজার ৭৩০টি শয্যা খালি পড়ে আছে। সারাদেশে মোট হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা রয়েছে দুই হাজার ৪৪৯টি শয্যায়। এর মধ্যে এক হাজার ৫৭টিতে রোগী থাকলেও বাকি এক হাজার ৩৯২টি খালি আছে। এছাড়া মোট ভ্যান্টিলেটর এক হাজার ৩৪২টি ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে চার হাজার ৯০৩টি শয্যায়।
বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সংখ্যক নয় হাজার ৩০৪টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি এক হাজার ২২৪টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে আট হাজার ৮০টি শয্যা। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে এক হাজার ২৪০টি শয্যায়। এর মধ্যে ৩০৭টিতে রোগী থাকলেও বাকি ৯৩৩টি খালি পড়ে আছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে তিন হাজার ৮২৯টি শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৩১৫টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে তিন হাজার ৫১৪টি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৪১৪টি। এর মধ্যে ২৪৪টিতে রোগী থাকলেও বাকি ১৭০টি খালি পড়ে আছে।
বরিশাল বিভাগে এক হাজার ১৬৪টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি ২৪টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে এক হাজার ১৩৬টি শয্যা। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ১০৪টি শয্যায়। এর মধ্যে ৮৯টিতে রোগী থাকলেও বাকি ১৫টি শয্যা খালি আছে।
খুলনা বিভাগে দুই হাজার ১৫৬টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৯৭টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে দুই হাজার ৫৯টি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ২৭৫টি শয্যায়। এর মধ্যে ১৭৯টিতে রোগী থাকলেও বাকি ৯৬টি খালি আছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৬০টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৫২টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে এক হাজার আটটি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৯৮টি শয্যায়। এর মধ্যে ১৮টিতে রোগী থাকলেও বাকি ৮০টি খালি আছে।
রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ২১৭টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৯৪টিতে। রোগী না থাকায় খালি পড়ে আছে এক হাজার ১২৩টি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ১৬৬টি শয্যায়। এর মধ্যে ১৫৭টিতে রোগী থাকলেও বাকি নয়টি খালি আছে।
রংপুর বিভাগে এক হাজার ৪৯৭টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৮৭টিতে। রোগী না থাকায় খালি আছে এক হাজার ৪১০টি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৯৫টি শয্যায়। এর মধ্যে ৫০টিতে রোগী থাকলেও বাকি ৪৫টি খালি আছে।
সিলেট বিভাগে এক হাজার ৫৭৩টি কোভিড ডেডিকেটেড শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ১৭১টিতে। রোগী না থাকায় খালি আছে এক হাজার ৪০২টি শয্যা। এ বিভাগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৫৭টি শয্যায়। এর মধ্যে ১৩টিতে রোগী থাকলেও বাকি ৪৪টি খালি আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৬৮১ জন। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৯০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন।
চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত হু হু করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর হার বাড়ছিল। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ওই বছরের জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপর আস্তে আস্তে সংক্রমণের হার নামতে থাকে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে এ হার আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছায়। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রোগী ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে থাকে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যু— দুটোই কমে আসে।
কিন্তু মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে সংক্রমণ শুরু হয়। ওই সংক্রমণ ধাপে ধাপে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত জুনের শেষে গিয়ে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়ায়। একপর্যায়ে রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে ওঠে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার। দৈনিক মৃত্যুও দুই শতাধিক হয়েছিল। আগস্টের শুরুর দিক থেকে সংক্রমণে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে আছে।
আজ শনিবার (৬ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৮৯১ জন। এ সময় ১৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৫ জন।
Discussion about this post