হার্টবিট ডেস্ক
বিগত পাঁচ (৫) বছরে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) শনাক্তে স্ক্রিনিং করা নারীদের মধ্যে গড়ে প্রায় ৪ দশমিক ২৭ শতাংশের শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব মিলেছে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে প্রায় ৫ জন নারীর পরীক্ষায় যৌন সংক্রমিত এই ভাইরাসটি আক্রান্ত হচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আর এই ধারা চলতে থাকলে আগামী দিনে দেশের নারীদের জন্য এটি ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘ইলেক্ট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং’ শীর্ষক কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ও বিএমইউ-এর গাইনি অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা।
গবেষণা উপস্থাপনায় জানানো হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এইচপিভি স্ক্রিনিং করা হয়েছে মোট ৩৮,১৮৩ জন নারীকে। তাদের মধ্যে ১৪৩১ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, আর ৩৬,৭৫২ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ৪ জন নারী এইচপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত।
সালভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালে স্ক্রিনিং হয় ৩ হাজার ৩১৯ জন নারীর, পজিটিভ ১০৯ (৩.২৮%), নেগেটিভ ৩ হাজার ২১০ জনের। ২০২২ সালে স্ক্রিনিং করা হয় ৪ হাজর ৪৪৬ জনের, যেখানে পজিটিভ আসে ১৫৯ (৩.৫৭%), আর নেগেটিভ আসে ৪ হাজার ২৮৭ জনের। এরপর ২০২৩ সালে স্ক্রিনিং হয় ১৩ হাজার ৬৭৬ জনের, যাদের মধ্যে পজিটিভ ৪৮১ (৩.৫২%) এবং নেগেটিভ আসে ১৩ হাজার ১৯৫ জনের। সবচেয়ে বেশি এইচপিভি স্ক্রিনিং হয় ২০২৪ সালে ১২ হাজার ৩৩৭ জনের, যেখানে পজিটিভ আসে ৪৯৭ (৪.০৩%) এবং নেগেটিভ আসে ১১ হাজার ৮৪০ জনের। এমনকি এই বছরের (২০২৫ সালে) এখন পর্যন্ত স্ক্রিনিং হয় ৪ হাজার ৪০৫ জন নারীর, যেখানে পজিটিভ আসে ১৮৫ জন (৪.২০%) এবং নেগেটিভ ৪ হাজার ২২০ জনের।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করে যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া গেলে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য তারা জাতীয় পর্যায়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি ব্যাপক স্ক্রিনিং ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা বলেন, প্রতিবছর স্ক্রিনিংয়ের হার বাড়ছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু এখনও আমরা শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ নারী জনগোষ্ঠীকে আমরা যতটা সম্ভব এই কার্যক্রমের আওতায় আনতে চাই। যেহেতু এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব, তাই সরকারের পাশাপাশি সব শ্রেণির অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদসহ আরও অনেকে।
Discussion about this post