হার্টবিট ডেস্ক
আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। আর ২০২১ সালে বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।
এমন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। অর্থাৎ ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে একে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) ১৪ নভেম্বরকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন শুরু হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব করে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসেবে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বারডেম একাডেমির পরিচালক ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। সারাবিশ্বেই এই রোগটি আছে। এই উপ-মহাদেশে প্রকোপ কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি আছে পরিবর্তন করা যায় এবং কিছু যায় না। কারও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বংশে কারও ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে অন্যরা কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন ও মেদ বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া হার্টের রোগী, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, কোলেস্টরেল বেশি, ধূমপান করেন, শরীরে ইনুসলিনের কার্যক্ষমতা কম, তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকি কমাতে পারলে রোগটি প্রতিরোধ সম্ভব।
অপরদিকে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নগরায়ন ও জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস একবার হলেই চিকিৎসা নিতে হয় আজীবন। অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা যদি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন তাহলে অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভাস এবং জীবনমানের পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ঝুঁকি এড়ানো যায়। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুই জন নতুন ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত হয়!
Discussion about this post