অধ্যাপক হারাধন দেবনাথ
ব্রেন এজিং হলো মস্তিষ্কে বার্ধক্য চলে আসার সমস্যা। এর প্রধান লক্ষণ হলো, স্মৃতিশক্তি কমতে থাকা। এই সমস্যা শুরু হলে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে অর্থাৎ ব্রেন শুকিয়ে যেতে থাকে। ফলে মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলো আস্তে আস্তে অকার্যকর হতে থাকে এবং ব্রেনের আয়তনও কমে যায়।
যে কারণে হয়
মস্তিষ্ক যখন অলসভাবে দিন কাটায়, তখন ব্রেন এজিংয়ের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়। আবার ব্রেন যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে এজিংয়ের প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে এগোয়। বংশগত কারণেও ব্রেন এজিং হতে পারে। আবার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং হরমোনাল কারণও এজিং প্রসেস প্রভাবিত করতে পারে।
রোগ শনাক্তের লক্ষণ
ব্রেন এজিংয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। কোনো ঘটনা, জিনিস বা কারোর নাম, ঠিক সময়ে ঠিক শব্দটা সহজে মনে পড়তে চায় না। পর্যায়ক্রমে খুব সাধারণ কাজ যেমন কোনো একটা জিনিস বিছানা থেকে টেবিলে সরিয়ে রাখা, মাটিতে পড়ে থাকা কোনো জিনিস তুলে রাখা– এসব কাজ করতেও সমস্যা হয়।
বয়স্কদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়, জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে পারছেন না। সেই সঙ্গে কমে আসে বিচার ক্ষমতা। এরই হাত ধরে আসে ডিপ্রেশন। ব্রেনের ক্ষয় যত বাড়তে থাকে, এ লক্ষণগুলো ততই প্রকট হতে শুরু করে। কিছু কিছু অসুখ রয়েছে, যাতে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যেমন– মাথায় টিউমার, স্ট্রোক, থাইরয়েড, এনকেফেলাইটিস ইনফেকশন জাতীয় অসুখে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব থেকেও সাময়িক স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। মানসিক সমস্যা, অত্যধিক মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকেও ভুলে যাওয়া এবং বিচার করার ক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অসুখজনিত কারণে স্মৃতিলোপ হলে তার চিকিৎসা সম্ভব। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে স্মৃতিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অসুখের কারণে স্মৃতিলোপ না হলে ভুলে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে ব্রেন এজিং বা ব্রেন ডিজেনারেশন বলেই ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পায়।
চিকিৎসা:
ব্রেন এজিংয়ের সে রকম কোনো চিকিৎসা এখনও নেই। তবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্রেন এজিং প্রসেস থামানো বা কিছুটা রোধ করা সম্ভব। ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে। চিনি বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেতে এবং কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সচল রাখতে হবে। সর্বোপরি নিয়মিত নিউরো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নিউরোসার্জারি বিভাগ, ল্যাবএইড হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
Discussion about this post