হার্টবিট ডেস্ক
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে গত ১৮ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম পূর্ব জরিপ পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা উত্তরের ৪০টি এবং দক্ষিণের ৫৮টি ওয়ার্ডে এই জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার প্রায় ৪৪ শতাংশ বহুতল ভবনেই এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এ দিকে, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে বহুতল এসব ভবন, বাসা-বাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনে উৎপন্ন হওয়া লার্ভাকেই দায়ী করে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভা কক্ষে দেশে চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রি-মনসুন সার্ভের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি জানান, ঢাকার ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বহুতল ভবনে, ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ সাধারণ বাসা-বাড়িতে এবং ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক ড্রাম, এসির পানি, ফুলের টব ও ছাদে জমা পানিতে এডিসের সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে।
নাজমুল ইসলাম বলেন, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশা। ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী মানুষের অসচেতনতা। দুই সিটি করপোরেশনের বহুতল ভবন এবং বাসা-বাড়িতে সবচেয়ে বেশি এডিসের লার্ভা মিলেছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটি। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এখানে। এই ফলাফলের মানে হলো, এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি। এই অবস্থায় সবার সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, রাজধানীতে মুগদা হাসপাতাল এলাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি। কারণ সেখানে ডেঙ্গু মশা ছড়িয়ে রয়েছে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বেশি রয়েছে। সেখানেও জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও বিস্তার ঘটেছে ডেঙ্গুর।
অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমরা প্রতিবছর সংকটময় মুহূর্ত পার করি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি মেডিকেল, হাসপাতালে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলেও আমাদের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা এগিয়ে আছে। দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা খুবই সুচতুর। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন। সবার সম্মিলিত সহায়তা ছাড়া ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. রাশেদা সুলতানা, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখার পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সৌজন্যে-ঢাকাপোষ্ট
Discussion about this post