হার্টবিট ডেস্ক
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় একটি স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার।এই স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবার আওতায় প্রতিটি মানুষের কাছে থাকবে একটি ‘স্বাস্থ্য সেবা কার্ড’, কার্ডে দেওয়া থাকবে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নাম্বার। আর সেই নাম্বারে ফোন করলেই ঘরে বসেই মিলবে যেকোনো রোগের চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ।
ইতোমধ্যেই বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলার দেড় হাজার মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘স্বাস্থ্য সেবা কার্ড’ নামক বিশেষ একটি স্মার্ট কার্ড। আলোচিত এই চিকিৎসকের চাওয়া- দেশেই ‘আমেরিকা স্টাইলের’ স্বাস্থ্যসেবা পাবে মানুষ।
গত মঙ্গলবার (৯ মে) স্বাস্থ্যসেবা ও দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। জানান স্মার্ট সাস্থ্যসেবা নিয়ে আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা।
ডা. ফেরদৌস বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা কার্ড পৌঁছে দিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে আজকে দেবিদ্বার উপজেলার সাড়ে ছয়শ বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে এই কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমার নিজ গ্রামের সাড়ে তিনশো পরিবার, দেবিদ্বারের প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে মোট ১৬০ জন ওয়ার্ড মেম্বার, এবং আমাদের ফাউন্ডেশনের যারা রেজিস্টার্ড কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তারাও প্রায় আছেন ১৬০ জনের মতো। তাদের সবাই এই স্বাস্থ্যসেবা কার্ডের আওতাভুক্ত হবেন।
তিনি বলেন, কার্ডগুলোতে চিকিৎসকের নাম্বার দেওয়া আছে, যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে ওই নাম্বারে ফোন করে আইডি নম্বর বলে সমস্যার কথা বললেই একজন ডাক্তারের সাথে তাকে সমন্বয় করিয়ে দেওয়া হবে। সাধারণ কোন বিষয় হলে তখন তাকে নির্ধারিত একটা সময় বলে দেওয়া হবে যে, ওই সময়ে চিকিৎসক আপনাকে ফোন দিবে। আর রোগী যদি বলে জ্বর, পেটে ব্যথা বা জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাহলে তাৎক্ষণিক একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তাকে কথা বলিয়ে দেওয়া হবে। এই চিকিৎসা সেবার জন্য রোগীকে কোন টাকা দিতে হবে না। আমার এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো- মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবাটি পৌঁছে দেওয়া এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করা।
ডা. ফেরদৌস বলেন, কোন রোগীকে যদি পরিস্থিতি বুঝে হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের রেফারেল কিছু হাসপাতাল আছে, আমরা তাদেরকে সেখানে পাঠাবো। কুমিল্লায় আমাদের কো-অর্ডিনেটর আছে, ঢাকায় আমাদের অফিস এবং কো-অর্ডিনেটর আছে। আমরাই রোগীকে নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করবো। এক্ষেত্রে রোগী যদি খরচ বহনে সক্ষম না হন, তাহলে সেটিও আমরা দেখবো। গত তিন বছর পর্যন্ত এরকম অসংখ্য রোগীকে আমরাই নিজ খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা যদি সমন্বয়টা করে দেই, তাহলে দেখা গেলো যে- আমাদের নেটওয়ার্কে ২০ হাজার টাকার সার্জারি সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে সেটি হয়ে যাবে। এরকম সেবা এখন পর্যন্ত আমরা হাজারেরও বেশি রোগীকে দিয়েছি। আমাদের আরেকটি পরিকল্পনা হলো- প্রতিদিন আমাদের দুইজন বা একজন ডাক্তার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ক্যাম্পেইন করবে। ক্যাম্পেইনে যেসব নারী চিকিৎসা বা পরামর্শ নিতে আসবে, তাদেরকে আমরা ওষুধসহ সেবা দিব। আমরা যদি এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমটি চালু করতে পারি, তাহলে ওষুধের কোনো সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যেই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ আছে। আমি যখনই দেশে আসি, আমার এলাকার মানুষের জন্য বিদেশি ওষুধ নিয়ে আসি। আরও প্রয়োজন হলে আমরা ওষুধ কিনে নিব।
মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমার জন্ম হয়নি, কিন্তু তাঁদের যে বীরত্বগাঁথা গল্প আমি শুনেছি, তাদের জন্য কিছু করা আমাদের জন্য কর্তব্য। সেই শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করে যাওয়ার পরিকল্পনা আমার ছিল। এরই অংশ হিসেবে আমরা আমাদের স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবায় তাদেরকে যুক্ত করেছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ অলিম্পিয়াডের-২০২৩ আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আওয়াল। বক্তৃতা করেন শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ ইনকের সাধারণ সম্পাদক আলামিন বাবুসহ আরও অনেকে।
Discussion about this post