হার্টবিট ডেস্ক
আইসিডিডিআর, বি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকিতে থাকে। এই রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে করোনা পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলোআপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসের ফলোআপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া’য় প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) অ্যালায়ান্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকিউলোসিস ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) এ গবেষণায় অর্থায়ন করে।
বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআর, বি’র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন বা পা ফুলে যাওয়া) এবং স্নায়বিক (পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিম ঝিম করা ও ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অস্বাভাবিকতা) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। হাসপাতালে ভর্তি করা এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় বলা হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্তে¡ও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার সম্ভাবনা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল। এজন্য যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো, হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনি জনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উলেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।
এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ এটি দেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে উলেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আইসিডিডিআর, বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ গবেষণার ফলাফলের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘করোনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা যদি নিয়মিত ফলোআপ করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন তবেই এই গবেষণা সার্থক হবে।’
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘ মেয়াদি কোভিড জটিলতা ও তা সমাধানের জন্য আইসিডিডিআর, বি এবং বিএসএমএমইউ’র বিজ্ঞানীদের এই যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এ সংক্রান্ত গবেষণার আরও নতুন কিছু ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আইসিডিডিআর, বি ও বিএসএমএমইউ যৌথভাবে আরও নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
Discussion about this post