হার্টবিট ডেস্ক
স্পাইন সার্জারিতে বাংলাদেশ স্বনির্ভর। ভারতের চেয়ে কম খরচে দেশেই সব ধরনের নিউরো স্পাইন চিকিৎসা করা সম্ভব বলে দাবি করেছে নিউরো স্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি। আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও রেডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ জাতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলন উপলক্ষে এ মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চমেকের নিউরো সার্জারি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং নিউরো স্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. কামাল উদ্দিন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চমেকের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর ডা. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে কোনো ধরনের নিউরো সার্জারি করতে সক্ষম। এছাড়া বাংলাদেশে নিউরো স্পাইন চিকিৎসার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় একেবারেই সামান্য। বেসরকারিভাবেও বেশিরভাগ সার্জারির খরচ পাঁচ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার মধ্যেই থাকছে। বড় সার্জারি হলে ৫০ হাজার থেকে দুই-আড়াই লাখ টাকার মধ্যেই চিকিৎসা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো মেরুদণ্ডের চিকিৎসা, অপারেশন পদ্ধতি, সেবাদান কার্যক্রম ও নিউরো স্পাইনের সব ধরনের চিকিৎসা দেশেই হয়ে থাকে। কিন্তু প্রচার-প্রচারণা না থাকায় দেশের মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ সেবা নেওয়ার জন্য যায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে- বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বারবার ফলোআপ করতে না পারার কারণে সাধারণ রোগীরা আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তাই বাংলাদেশে এখন প্রখ্যাত নিউরো স্পাইনের সেবাদানের জন্য ও এ সেবাকে স্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে সার্বিক কাজ করে যাচ্ছে নিউরো স্পাইন সোসাইটি।
চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আলাদা নিউরো স্পাইন বিভাগ চালুর সরকারি অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিভাগটি চালু প্রক্রিয়াধীন। চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ৪৫টি বেড রয়েছে। কিন্তু আজও রোগী ভর্তি রয়েছে ২১৫ জন। কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়ে যায়। বিভাগটিতে পাঁচজন অধ্যাপকের মধ্যে চারটি পদই খালি, পাঁচ সহযোগী অধ্যাপক পদের একজনও নেই। সাত সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে রয়েছে মাত্র তিনজন। তারপরেও রোগীদের রাত-দিন সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালেই নিয়মিত সার্জারি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে ৪৫ জনের বেডে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের সক্ষমতা ও আন্তরিকতার অভাব নেই। চমেক হাসপাতালের পাশাপাশি চট্টগ্রামে পাঁচ থেকে ছয়টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে। ওই মেডিকেল কলেজগুলোতে নিউরো সার্জারি বিভাগ খোলা হলে মানুষের চিকিৎসা সেবার পরিধি অনেক বেড়ে যেতো।
নিউরো সার্জারি এবং নিউরো স্পাইন চিকিৎসা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. আনিসুল ইসলাম খান বলেন, ভারত থেকে অপারেশন করার পরেও অনেক রোগীকে বাংলাদেশে অপারেশন করতে হয়েছে। অপারেশন করার পর রোগীরা আগের চেয়ে অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আমাদের দেশে কর্পোরেট হাসপাতাল রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনেকে নিউরো স্পাইন চিকিৎসার জন্য যান। কিন্তু ভারতে অপারেশন করলে সবসময় সফল হবেন, তা কিন্তু নয়।
‘আমি নিজেও দুজন রোগীকে অপারেশন করেছি। এক শিশুর ভারতে অপারেশন হয়েছিল। পরে আবারও ভারতে চিকিৎসার জন্য তাকে যেতে হচ্ছিল। তখন তাদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচের হিসাব দিয়েছিল ভারতীয় হাসপাতালটি। অথচ ওই শিশুকে পরবর্তীসময়ে আমরা চট্টগ্রামের একটি কর্পোরেট হাসপাতালে অপারেশন করে অনেকটা সুস্থ করে তুলেছি। যেখানে খরচ হয়েছে সোয়া চার লাখ টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা একেকজন একেক ক্ষেত্রে দক্ষ। আমাদের রোগ হিসেবে সেইসব দক্ষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সুচিকিৎসা আমাদের দেশে বসেই মিলবে। দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
দেশেই আন্তর্জাতিকমানের নিউরো স্পাইন সেবাদান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি, গবেষক সৃষ্টিসহ স্থানীয় পর্যায়ে নিউরো স্পাইনের চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য ২০১৫ সালে দেশের সব বিশেষজ্ঞ নিউরো স্পাইন চিকিৎসকরা একত্রিত হয়ে ‘নিউরো স্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ যাত্রা শুরু করে।
বিগত বছরগুলোতে তিনটি জাতীয় নিউরো স্পাইন সাইন্টেফিক কনফারেন্সের আয়োজন করে সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় ও স্থানীয় পর্যায়ে নিউরো স্পাইন বিষয়ে চিকিৎসক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বাংলাদেশে এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত বিষয়টি নতুন করে তুলে ধরতে নিউরো স্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামেও সাইন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
আজ ও আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী জাতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের এ সম্মেলনে চট্টগ্রামসহ আশপাশের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও গবেষক এবং নবাগত সার্জনসহ প্রায় তিন হাজার মানুষ অংশ নেবেন বলে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
Discussion about this post