হার্টবিট ডেস্ক
মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই যমজ শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় শিশু দুটির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সভায় এ তথ্য জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার সার্বক্ষনিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশুদ্বয়ের চিকিৎসার সকল খরচ বহন করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদুটির চিকিৎসার জন্য যা যা করার দরকার, তাই যেন আমরা করি। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারো সহযোগিতা লাগলে তাকেও ডাকা হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সিটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে মেডিকেল বোর্ডের এসে শিশু দুটির কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারলাম, শিশু দুটির অপারেশন অত্যান্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এ অপারেশ বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।
মেডিকেল বোর্ডে ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, শিশু দুটির মেরুদণ্ড জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজ করতে হবে। ইউরোলজিক্যাল কাজও বেশ জটিল।
বিএসএমএমইউর নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে ভতি থাকা মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশু (Conjoined twin) নুহা ও নাবা। তাদের বয়স ৮ মাস ১৩ দিন। কুড়িগ্রাম জেরঅর কাঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে এই জমজ কন্যা সন্তানদ্বয়ের জন্ম হয়। তাদের পিছনে মেরুদন্ড জোড়া লাগানো আছে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় (Pygopagus Conjoined twin) বলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যমজ শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সভা ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো যমজ শিশুর চিকিৎসায় ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, ভাসকুলা সার্জারি, অ্যানেসথেশিয়া, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন।
কুড়িগ্রামের আলমগীর রানা, পেশায় পরিবহন শ্রমিক। প্রায় সাড়ে সাত মাস আগে রানার স্ত্রী নাসরিন ফুটফুটে দুই যমজ কন্যাসন্তানের জন্য দেন। তবে যমজ শিশু দুটির মেরুদণ্ড ও স্পাইন জনগতভাবে জোড়ালাগা। দরিদ্র পিতা- মাতার পক্ষে এ ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব। তাই এখন পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেশে কোনো মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচারে, এটাই প্রথম। জটিল, কঠিন ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।
সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, কুড়িগ্রামের জোড়া লাগা শিশু দুজনের চিকিৎসার ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। আমাদের ভিসিকে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিশু দুটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে এর অপারেশন করা লাগবে । নিউরো সার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জন, অ্যানেস্থিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগের কথা। তিনি চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এ শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকাতে আসতে অনুরোধ করেন।
অধ্যাপক হোসেন বলেন, পাঁচ মাস ধরে এ মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুই ধাপে অস্ত্রোপচার হবে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এক মাস পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। দুধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
তিনি বলেন, মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর। তবে আমরা আশাবাদী।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন আশা করেন অপারেশন সফল হলে বাংলাদেশে শৈল্য চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগ জানায়, শিশু নুহা ও নাবার বয়স ৭ মাস ১৩ দিন। শিশুদের মায়ের অতীতে তার কোনো খারাপ প্রসূতি ইতিহাস ছিল না, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ছিল না, কোনো পরিচিত অসুস্থতা ছিল না, এমনকি বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস ছিল না, তিনি কখনো কোনো টেরাটোজেনিক ড্রাগ গ্রহণ করেননি। জন্মগত অসঙ্গতির কোনো পারিবারিক ইতিহাসও নেই। প্রসবপূর্ব ২০ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় যমজ দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে কোনো জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থার বাকি সময়টা ছিল অস্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে ওঠে। এ সময় তাদের জন্মের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ এবং কৌতুকপূর্ণ, তবে মূত্রনালী পৃথক হলেও তাদের মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।
Discussion about this post