হার্টবিট ডেস্ক
৮ শতাংশ জীবাণুর ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার মতো ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বা এসব জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ছয় হাজার ৮৬৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য মিলছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) আইইডিসিআর কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
তারা বলছেন, যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ওষুধ আর সাড়া দেয় না, তখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এর উদ্ভব হয়। এতে সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে উঠছে, রোগের বিস্তার ঘটছে, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
সেমিনারে জানানো হয়, শুধু ২০১৯ সালে এএমআরের ফলে বিশ্বজুড়ে এক দশমিক ২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে একটি হলো এএমআর। এএমআর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, প্রতি বছর ১৮-২৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সপ্তাহটি পালন করেছে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রিপন বড়ুয়া বাংলাদেশের এএমআর সার্ভেইল্যান্সের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড উপস্থাপনা করেন। তিনি বলেন, আইইডিসিআর ২০১৭ সাল থেকে এএমআর সার্ভেইল্যান্স সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে। সারা দেশের আটটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্সটি পরিচালিত হয়। হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি, শিশু বিভাগ, বার্ন ইউনিট ও আইসিইউতে ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগের নির্বাচিত রোগীদের মধ্য থেকে রক্ত, প্রস্রাব, মল, কফ থেকে নমুনা এবং ওই রোগীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে জীবাণু শনাক্তকরণ এবং শনাক্তকৃত জীবাণুর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতার হার দেখার জন্য পরীক্ষা করা হয়। সাইটগুলো থেকে প্রাপ্ত সব জীবাণু ও রোগী সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আইইডিসিআরে নিয়মিত পাঠানো হয়।
ডা. রিপন জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে খুব শিগগির এ সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এএমআর সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করেন। এই সময়ের মধ্যে মোট ২৭ হাজার ৪৩৮ জন রোগীর বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৮ শতাংশ জীবাণুর মধ্যে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা পাওয়া যায়। এ ধরনের জীবাণু মূলত শনাক্ত হয়েছে বার্ন ইউনিট, আইসিইউ ও সার্জারি বিভাগ থেকে। চলতি বছরে পরীক্ষাকৃত ২৭৩টি নমুনার মধ্যে ৪৮ শতাংশ ব্যাকটেরিয়ায় শনাক্ত হয় এক ধরনের রাসায়নিক এনজাইম, যা ব্যাকটেরিয়া নিজে তৈরি করে এবং যা অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতাকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম।
তিনি জানান, শনাক্ত জীবাণুসমূহের মধ্যে এসিনিটোব্যাক্টর নামক যে জীবাণুটি পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে মোটামুটি সব ধরনের এন্টিবায়োটিকই অকার্যকর। আইসিইউ হতে সংগৃহীত নমুনাতে এ জীবাণুর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরও জানান, এজিথ্রোমাইসিন ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, বাকি সব ক্রিটিক্যালি অ্যান্টিবায়োটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস (সেফটাজিডিম, সেফিক্সিম, সেফেপাইম, সেফট্রায়াক্সোন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন) জীবাণুর বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে বেশি হারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
Discussion about this post