ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে বৃহদন্ত্র ও কোলনে প্রদাহ এবং ঘা হয়। এ ঘা রোগীর পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে। ছোট ছোট আলসার বা ঘা পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতন না হওয়ায় আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।
কাদের হয়, কেন হয়
আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগটি সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মাঝামাঝি লোকজনের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি ঠিক কাদের হয় তা সঠিকভাবে এখনো নির্ণয় করা যায়নি। তবে নিকট আত্মীয়, যেমন মামাতো, চাচাতো, খালাতো ও ফুপাতো ভাই-বোনদের সন্তানদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। সাধারণত কোলনের অন্ত্র গাত্রের আবরণ দুর্বল হলে এ রোগ হতে পারে। দুশ্চিন্তা কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে আমাশায় ভুগলে আলসারেটিভ কোলাইটিসের উপসর্গগুলো বারবার দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
এর লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে-
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া।
- পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া।
- মলদ্বার দিয়ে মিউকাস কিংবা আমজাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
- তলপেটে মোচড় দেওয়া এবং সঙ্গে প্রচণ্ড পায়খানার বেগ অনুভব করা।
- রোগীর শরীরে পানি, লবণ এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।
যথাসময়ে চিকিৎসা না করানোর ফলাফল
যথাসময়ে এর চিকিৎসা না হলে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন-
- কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
- কোমর, মেরুদণ্ড, হাঁটু, পায়ের গোড়ালিসহ দেহের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হওয়া।
- চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল দাগ অথবা আলসার হওয়া।
- চোখের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগ হয়ে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়া।
- মুখ, হাত ও পায়ে পানি এসে শরীর ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা।
- জন্ডিসসহ লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে লিভার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা।
চিকিৎসা
সাধারণত স্টেরয়েড ও সালফাসেলজিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে মাঝে মধ্যে হাইড্রোকরটিসন, এজাথায়েপ্রিন অথবা সাইক্লোসপোরিন ব্যবহার করলে অনেকের মুখ ও শরীর ফুলে যেতে পারে, মাথার চুল পড়ে যেতে পারে, অনিদ্রা, অরুচি, হাতে-পায়ে জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাবসহ নানাবিধ শারীরিক অসুবিধা হতে পারে।
অপারেশন
আলসারেটিভ কোলাইটিসের স্থায়ী চিকিৎসা হতে পারে অপারেশন। তবে সব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার হয় না।
যেসব ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার-
- রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে।
- রোগী ঘন ঘন পায়খানায় যেতে হাঁপিয়ে উঠলে।
- পায়খানা ধরে রাখতে না পারলে এবং রক্তশূন্যতায় ভুগলে।
- দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহার করার পরও স্টেরয়েড কাজ না করলে।
- কোলনোস্কপি বা সিগময়ডোস্কোপি করার পর ক্যানসার ধরা পড়লে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
Discussion about this post