ডা. মো. আরমান হোসেন রনি
অনেক মা চিকিৎসকের কাছে আসেন তাঁদের সন্তানদের চোখে পানি আসা এবং ময়লার সমস্যা নিয়ে। তাঁরা প্রায়ই যে কথাটি বলেন তা হলো, শিশুর জন্মের কয়েক দিন পর থেকে এক বা উভয় চোখ দিয়ে পানি ও ময়লা আসে। তাঁদের ধারণা, চোখে বুকের দুধ ছিটকে পড়েছে অথবা শিশুর হাতের নখের আঁচড় লেগেছে।
মানুষের চোখের সঙ্গে নাকের একটা যোগাযোগ আছে। এটাকে নেত্রনালি বলে। এ জন্য মানুষ কাঁদলে চোখের পানি নাকে চলে যায়। একে ন্যাসো ল্যাকরিমাল ডাক্ট বলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ শতাংশ নবজাতকের ক্ষেত্রে এই নালি জন্মের পর বন্ধ থাকে। একে বলে জন্মগত ন্যাসো ল্যাকরিমাল ডাক্ট ব্লক। সঠিক চিকিৎসায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে এই নালি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সমস্যা হচ্ছে, মায়েদের ভুল ধারণায়। তাঁরা মনে করেন, দুধ পড়েছে, এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।
মূলত দুধ নয়। এটা শিশুর জন্মগত সমস্যা, যা এমনিতে অনেকের ভালো হয়। অধিকাংশই হয় না। চিকিৎসা না করানোর জন্য চোখের প্রদাহ এবং নেত্রনালির প্রদাহ হয়ে যায়, যা শিশু ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসা
অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ এবং ম্যাসাজ। সঠিক নিয়মে ম্যাসাজ করলে অধিকাংশ শিশু সুস্থ হয়ে যায়। একে বলে হাইড্রোস্টাটিক ন্যাসো ল্যাকরিমাল ম্য়াসাজ।
ম্যাসাজের পদ্ধতি
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন অন্তত ৪০ বার ম্য়াসাজ করতে হবে। প্রতিবার ড্রপ দেওয়ার পরে ১০ বার করে, দিনে চার ধাপে ৪০ বার ম্য়াসাজ করতে হবে। ম্যাসাজে ভালো না হলে আট মাস থেকে এক বছরের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাইনর সার্জারি কিংবা ডাক্ট প্রোবিং করার প্রয়োজন হতে পারে।
সাবধানতা
কোনো কোনো শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ার ভিন্ন কারণ থাকে। শিশুদের গ্লুকোমার মতো কারণও থাকতে পারে। চক্ষু চিকিৎসক সেটা নির্ণয় করবেন। শিশুর চোখের যত্নে কোনো অবহেলা করবেন না।
ডা. মো. আরমান হোসেন রনি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
Discussion about this post