ডা. মো. বখতিয়ার
রাতের বেলা পা কামড়ায় ও জ্বালাপোড়া করে, কিন্ত দিনের বেলা ব্যথা উধাও। এ অবস্থাকে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘মাসল ক্র্যাম্প’। এতে রাতে পায়ের ‘কাফ’ বা পেছনের পেশিতে ও পায়ের পাতায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই ব্যথা মাঝে-মধ্যে ঊরুতেও উঠে আসে। কখনো ব্যথার তীব্রতা এতই বেড়ে যায় যে ভুক্তভোগী অনেক সময় ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠেন। এ সময় পেশিও শক্ত হয়ে যায়। এ রকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কারণ
ঋতু পরিবর্তন: সাধারণত গরম ও শীতকালে এ ধরনের পায়ের ব্যথা বেশি হয়। গ্রীষ্মকালে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বেশি থাকে বলে স্নায়ুর বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ বেশি সক্রিয় হয়। ভিটামিন ডি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছালে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত হয়, ফলে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া স্নায়ুর সমস্যায়ও হতে পারে এটি। তবে এ ক্ষেত্রে পেশির সমস্যাকে দায়ী করা হয় না।
বয়সের কারণ: বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি পৌঁছালে নড়াচড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত স্নায়ুগুলো নষ্ট হতে থাকে। ফলে ব্যথা হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে নিয়মিত পা ব্যথা হলে তা জটিল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
পুষ্টির ঘাটতি: এ ধরনের ব্যথার একটি বড় কারণ প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পানিশূন্যতা: রাতের বেলা পা ব্যথার কারণ হতে পারে পানিশূন্যতা। পানির অভাবে রক্তে ‘ইলেকট্রোলাইটের’ ভারসাম্যে তারতম্য দেখা দিলে ব্যথা হয়।
পায়ের অতিরিক্ত ব্যায়াম: পায়ের ব্যায়াম বেশি করলে বা অতিরিক্ত হাঁটলে পায়ে চাপ পড়ে বলে রাতে পাব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরের নিচের অংশে তরল ও রক্ত জমতে থাকে। ফলে শরীরে তরলের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ব্যথা হয়। অনেকক্ষণ রোদে বা গরমে হাঁটাহাঁটি করলে লবণের ঘাটতির ফলে পা কামড়ায়।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা: বাত, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ধূমপান এমনকি হতাশা থেকেও পাব্যথা হতে পারে। কোনো কারণে মাংসপেশিতে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে পা কামড়াতে পারে। মাংসপেশি বা স্নায়ু জটিলতার কারণেও পা কামড়ানো দেখাদিতে পারে।
গর্ভের সময়: গর্ভবতী মায়েদের রক্তসঞ্চালনে সমস্যা হলে কিংবা ওজন বাড়ার কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে।
এ অবস্থায় কী করবেন
চিকিৎসকেরা বেশির ভাগ পা কামড়ানোর কারণ সাময়িক বলে মনে করেন। এতে বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই বলেও মনে করেন তাঁরা। যথেষ্ট বিশ্রাম, প্রচুর তরল পান, রাতের বেলা পায়ের কিছু প্যাসিভ বা পরোক্ষ ব্যায়াম এবং কখনো কখনো কুইনিন সালফেটজাতীয় ওষুধ সেবনে এর প্রতিকার পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এ ধরনের ব্যথার ওষুধ খেতে হবে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতালসফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
Discussion about this post