হার্টবিট ডেস্ক
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ১০ বছর বয়সী ফাতেমা তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছে। তার মা বৃষ্টি আকতার তৃতীয় দিন তাকে নিয়ে এসেছেন মহাখালীর আইসিসিডিআর,বি-র ঢাকা হাসপাতালে (কলেরা হাসপাতাল)। সেখানে শিশু ওয়ার্ডে এখন চিকিৎসাধীন ফাতেমা। পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। মা তাকে একটু পর পর সেলাইন খাওয়াচ্ছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডও রোগীতে কানায় কানায় পূর্ণ।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আগে কিছু রোগীর চাপ থাকলেও এরপর অস্বাভাবিক হারে রোগী আসা বেড়েছে। অন্যান্য সময় গড়ে ২৫০ জন রোগী থাকে। তবে সোমবার (৩১ অক্টোবর) এক হাজার ১৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে সাড়ে পাঁচশ রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত বুধবার (২৬ অক্টোবর) থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সেদিন ৭২৪ জন রোগী ভর্তি হন। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫৭ জনে। ২৮ অক্টোবর ভর্তি ছিলেন এক হাজার ২০৩ জন, ২৯ অক্টোবর এক হাজার ২২৪ জন, ৩০ অক্টোবর এক হাজার ১৬২ জন।
গত মৌসুম থেকেও এই মৌসুমে রোগী আসার প্রবণতা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শীতের আগ দিয়ে এই সময় এতো রোগী আসাকে অস্বাভাবিকভাবেই দেখছেন তারা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা বেশিরভাগই আসছেন রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা, তুরাগ ও মোহাম্মদপুর থেকে। হাসপাতালে রোগী ভর্তির তথ্য বলছে, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫০-৬০ জন করে ডায়রিয়া রোগী আসছেন।
চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। জীবাণু সংক্রমিত হলে ডায়রিয়া হয়, দূষিত পানি খাওয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। এছাড়া দূষিত খাবার বা পঁচা-বাশি খাবার খেলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলেও ডায়রিয়া হতে পারে।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক কাশেম রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে কলেরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন মঙ্গলবার। দুই দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরাসরি পানির কল থেকে কিংবা বাইরে থেকে পানি খান।
অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মোদাসসের জানান, তিনি ঢাকায় এসেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে তিন-চার দিন পর এখন কিছুটা সুস্থ অনুভব করছেন। তিনি পানি কীভাবে খেতেন জানতে চাইলে সরাসরি কলের পানি পান করার কথা জানান। পানি ফুটিয়ে খাননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের চাপে আসলে সময় করা যায় না পানি ফুটানোর জন্য।
আইসিডিডিআরবি’র ঢাকা হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টেনিয়াল ইউনিটের ইনচার্জ ডা এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই সময়টাকে পোস্ট মুনসুন বলি। বছরে দুই বার মৌসুমি বৃষ্টিপাতের আগে ও পরে আমাদের দুটি সময়ে রোগী বেড়ে যায়। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার একটু অস্বাভাবিক হারে রোগী বাড়ছে। এখন পর্যন্ত যারা আসছে তাদের মধ্যে সিভিয়ার ডিহাইড্রেশন আছে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ। যারা আসছে তাদের বেশিরভাগই পূর্ণবয়স্ক।
তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া যেহেতু একটি পানিবাহিত রোগ, তারা কোনও না কোনোভাবে দূষিত পানির সংস্পর্শে এসেছে কিংবা পান করেছে। আমাদের দেশের মানুষের একটা অভ্যাস আছে সরাসরি পানি খাওয়া, পানি না ফুটানো, বিশুদ্ধ না করা, হোটেলের পচা-বাসি খাবার খাওয়া, খোলা খাবার খাওয়া। যখনই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন আমরা ধরে নেই যে পানি সংক্রান্ত কোনও একটা জটিলতা কোথাও হয়েছে। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post