হার্টবিট ডেস্ক
আজ (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। বিশ্বের ১২১টি দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘অস্টিওআর্থাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি’।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিওথেরাপি গুরুত্ব, ফিজিক্যাল থেরাপিস্টদের ভূমিকা ও অবদান চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ও সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে থেকে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপি ৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমাজের প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন করতে সর্বত সহায়তা প্রদান করছে। আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ১০৩টি প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। অটিজম রিসার্চ সেন্টারের মাধ্যমে অটিজম সমস্যাগ্রস্থ শিশু ও ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ম্যানুয়াল এবং ইনস্ট্রুমেন্টাল থেরাপিসহ কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করছি।
সিআরপি অস্টিও-আর্থাইটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রাখবে এমন আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দক্ষতার সাথে অস্টিও-আর্থ্রাইটিসসহ বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে- চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের প্রায় ২৭.৭ শতাংশ অস্টিও-আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এই রোগের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু সিআরপি প্রতি বছর ৯টি শাখার মাধ্যমে দেশের প্রায় ৮০ হাজার রোগীকে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে আসছে।
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব অনেক। বলা হয়ে থাকে অনেক রোগের আসল মেডিসিন এই থেরাপি। অনেক সময় সঠিক ফিজিও থেরাপি দেয়া হলে অস্ত্রোপচারও লাগে না। অর্থোপেডিক্স, কার্ডিও পালমোনারি, নিউরোলজি, নিউরো সার্জারি, গাইনোকলজির মতো বহু রোগের ক্ষেত্রে ফিজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর বাত-ব্যথা বা আঘাতজনিত ব্যথার মতো স্বাস্থ্যসমস্যা নির্ণয় করে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেন। দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিশেষ করে বাত-ব্যথা ও পক্ষাঘাতের রোগীদের সমস্যা ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা, পোড়া রোগী, জন্মগতভাবে যেসব শিশু প্যারালাইসিস বা সেরিব্রাল পালসি ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত বা ঘাড়, হাত, পা বেঁকে যাওয়া ঠিক করতে পারে না, হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা, শল্যচিকিৎসা, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও পঙ্গু পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই।
পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ব্যয় করছে বিলিয়ন ডলার। বয়স্ক জন গোষ্ঠীর প্রতি পাঁচজনের একজন দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথায় আক্রান্ত ৪৯ শতাংশ মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে অংশ নিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যথায় আক্রান্তরা ব্যথার সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। চিকিৎসা মানেই ওষুধ নয় আর ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছেই। ২০১৬ সালে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে ৬৩ হাজার ৬৩২ জনের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে চিকিৎসাটি শুরু। ব্যাপক প্রচলন আছে বর্তমান সময়েও। দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, অসারতাসহ এ ধরনের রোগ নিরাময়ে ফিজিওথেরাপি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। কিন্তু চিকিৎসাটি চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও দেশে নেই কোনো ফিজিওথেরাপি কলেজ, কাউন্সিল। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় দেশের জনমানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। পড়াশোনার জন্য পঙ্গু হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকলেও পাস করার পর চাকরির নেই নিশ্চয়তা। ফলে অনেক মেধাবী চলে যাচ্ছেন বিদেশে। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এর মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ নানা ধরনের প্রতিবন্ধিতায় ভুগছেন। জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। বাত-ব্যথা, কোমর, মেরুদণ্ড ও ঘাড়ে ব্যথা, ক্রীড়াঘাত, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা (প্যারালাইসিস), মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (স্ট্রোক) সমস্যায় ভুগছেন। এসব রোগের অন্যতম চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে। তাদেরও ফিজিওথেরাপি জরুরি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও কর্মক্ষম করা না গেলে দেশের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ৭ দশমিক ৩ শতাংশ অস্টিওআথ্রাইটিস রোগী রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ নারী স্থূলতায় আক্রান্ত বা শারীরিক কার্যক্রমে কম সক্রিয়। অস্টিওআর্থাইটিস হলে হাড়জোড়ে ও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, চলাফেরায় কষ্ট হয়, এমনকি প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে।
Discussion about this post