ডা. কামরুল হাসান রিয়াদ
অনেক শিশুরই দেখা যায় তাদের ওপরের চোয়ালের সামনের দিকের চারটি দাঁত ক্ষয় হয়ে কালো হয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভেঙে গেছে। এ অবস্থার জন্য দায়ী বিশেষ এক ধরনের দন্তক্ষয়, যার নাম Nursing Bottle Caries
কখন হয়?
সাধারণত জন্মের পর এক বছরের মধ্যেই শিশুর সামনের দিকের দাঁত ওঠে। ওই বয়স থেকেই এটা হতে পারে। সাধারণত ২-৫ বছরের শিশুদের এটা দেখা যায়।
কাদের হয়?
যেসব শিশু বটল ফিড করে বা ফিডারে খায় এবং রাতে ঘুমের মধ্যে যেসব শিশুর ফিডারে খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের এটা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। অনেক সময় যেসব শিশু ঘুমের মধ্যে বুকের দুধ খায়, তাদেরও এটা হতে পারে।
কেন হয়?
রাতে ঘুমের মধ্যে ফিডারে খেলে দুধের একটা আস্তরণ সামনের ওপরের চারটা দাঁতের বাইরের দিকে পড়ে। দীর্ঘ সময় এটি থাকলে স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া গ্রুপ এটা ভেঙে এসিড তৈরি করে, যা দাঁত ক্ষয় করে। এ ছাড়া অনেক সময় ফিডারে দুধের সঙ্গে চিনি, সিরাপ ইত্যাদি মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো হয়; অনেকে শিশুর মুখের চুষনিতে মিষ্টি জাতীয় কিছু লাগিয়ে দেন, যা এ ধরনের দাঁত ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিসকে আরও ত্বরান্বিত করে।
লক্ষণ
– শিশুর বয়স ১.৫-৬ বছর।
– ওপরের চোয়ালের সামনের চারটা দাঁত আক্রান্ত হয়।
– শিশুর রাতে ঘুমের মধ্যে খাওয়ার (ফিডার বা বুকের দুধ) অভ্যাস থাকে।
– এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ওপরের চোয়ালের সামনের দাঁতের বাইরের দিকে বাদামি বা কালো দাগ দেখা যায়।
– শিশু যদি কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যস্ত হয়, তবে যেদিকে কাত হয়ে ঘুমায় সেদিকের পেছনের দাঁতগুলোতেও এই বিশেষ দাঁত ক্ষয়ের শুরু হয়।
প্রতিকার
এ অবস্থায় ক্ষয়ের পরিমাণ কম হলে ফিলিং করলেই হয়। যদি ক্ষয় অনেক গভীর হয় তবে পালপেকটমি (শিশুর বিশেষ রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট) অথবা এক্সট্রাকশন (দাঁত ফেলা) করা যেতে পারে। যদি ক্ষয় হতে হতে দাঁতটি ভেঙে যায় সে ক্ষেত্রে এক্সট্রাকশন হলো একমাত্র চিকিৎসা। তাই লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে ডেন্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হোন।
প্রতিরোধ
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই কিছু বিষয়ে একটু খেয়াল করে মেনে চললে এই সমস্যা থেকে সহজেই নিস্কৃতি পাওয়া যায়।
– শিশুর মুখে প্রথম দাঁত আসার সঙ্গে সঙ্গেই নিয়মিত সকালে ও রাতে ব্রাশ করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথমদিকে টুথপেস্ট ছাড়াই শুধু ব্রাশ ব্যবহার করুন।
-ফিডারে খাওয়ানো যথাসম্ভব পরিহার করুন। চামচ দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
-রাতে ঘুমের মধ্যে খাওয়ানো পরিহার করুন।
-শিশুর খাবারে বা চুষনিতে চিনি, সিরাপ বা মধু মিশিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
– প্রতিবার ফিডারে খাওয়ানোর পর শিশুকে পানি খেতে দিন, যাতে দাঁতের ওপর থেকে দুধের আস্তরণ ধুয়ে যেতে পারে।
-রাতে খাওয়ানোর পর পানি খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্কার ভেজা নরম কাপড় দিয়ে দাঁত এবং মাড়ি ভালো করে মুছে দিন।
– পরিস্কার আঙুল দিয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চার মাড়ি আলতো ম্যাসাজ করে দিন।
-প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার ডেন্টাল সার্জনের কাছে আপনার বাচ্চার মুখ ও দাঁতের নিয়মিত চেকআপের জন্য নিয়ে যান।
Discussion about this post