হার্টবিট ডেস্ক
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসাইনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও বিচারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)।
আজ মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুরে সংগঠনটির সভাপতি ডা. মো: মহিউদ্দিন জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মারুফ উল আহসান শামীম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র কর্তৃক গত ৮ আগস্ট ২০২২ রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ প্রাঙ্গণে বিনা উস্কানিতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মো: সাজ্জাদ হোসেনের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে এতে বলা হয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে দোষীদের সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে লাগাতার কর্মসূচি সহ পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণে ইন্টার্ন চিকিৎসা পরিষদ বাধ্য থাকবে।
এ বিষয়ে ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নির্মম আঘাতে তার কানের পর্দা ছিড়ে গেছে। কানে কম শুনতে পাচ্ছেন। দাঁতের মাড়ি কেটে গেছে। ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। নাকের সেপ্টাম ইনজুর হয়েছে।
নিজের ওপর চলা পাশবিকতার বর্ণনা দিয়ে ডা. সাজ্জাদ বলেন, সোমবার রাত ৯টার দিকে শহীদ মিনারে যান তিনি। সে সময় মূল বেদির পাশে মাটির ওপরের রেলিংয়ে বসে ছিলেন তিনি। তখন কয়েকজন ছেলে এসে তার পরিচয় জানতে চায়। ঢাকা মেডিকেলের বলার পরও তারা ডা. সাজ্জাদের পড়াশোনার বর্ষ জানতে চায়।
এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিচয় দিলে তারা তার আইডি কার্ড দেখতে চায়। আইডি কার্ড দেখাতে না পারায় চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘তাদের সাথে তো ঢাবির আইডি কার্ড আছে।’
এ সময় ডা. সাজ্জাদ ক্যাম্পাসের পাশেই এসেছেন উল্লেখ করে সবাই আইডি কার্ড সাথে নিয়ে ঘুরে কিনা, জানতে চান?
সঙ্গে সঙ্গে তাকে মারধর শুরু করে সন্ত্রাসীরা। তিনি অবাক হয়ে জানতে চান, তার দোষ কী? এর পর তাকে দ্বিতীয় দফায় মারতে শুরু করে তারা।
তিনি আরো জানান, ততক্ষণে ৪/৫ জনের আরেকটি গ্রুপ এসে তাকে ইচ্ছামতো পিটায়। তারা তার মাস্ক ছিড়ে ফেলে। কানের নিচে সজোরে আঘাত করায় তার মাথা ঘুরতে থাকে। এ সময় নিজেকে রক্ষায় বসে পড়লে মাথা ও মুখ বরাবর লাথি মারা হয়। এতে নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তখন পকেট টিস্যু বের করে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তখনো থামেনি পৈশাচিক হামলা।
এক পর্যায়ে স্থান ত্যাগ করতে বলে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু মাথা ঘোরার কারণে হাঁটতে না পরায় বসে থাকেন তিনি। আর এতে ইচ্ছামত মারতে থাকে তারা।
অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে নিজেরা একটি রিকশা ডেকে ডা. সাজ্জাদকে এতে উঠিয়ে দিয়ে চালককে বলে, ‘ও যেখানে নামতে চায়, নামিয়ে দিস।’
রিক্সা নিয়ে ববশিবাজার সিগনালের গেইটে গেলে রুমমেট এসে তাকে নিয়ে যায়। ডা. সাজ্জাদ বলেন, এরপর থেকে এক কানে কম শুনছেন তিনি। হামলায় দাঁতের মাড়িও কেটে গেছে। গালের পাশে ফুলে আছে। ডান পাশের চোখ লাল হয়ে আছে।
রুমে যাওয়ার পর তাকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হয়। পুলিশ কেইস সিলসহ ইঞ্জুরি নোট লিখেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে তাকে নাক-কান-গলা বিভাগে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা জানালেন, তার নাকের সেপ্টাম ইঞ্জুর্ড হয়েছে। কানের পর্দায় ব্লিডিং স্পট আছে, তবে হিয়ারিং লস আছে কিনা, তা বুঝতে বুধবার (১০ আগস্ট) অডিওগ্রাম করতে হবে।
ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা ঢাবি ও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সমানুভূতির কথা ব্যক্ত করে ডা. সাজ্জাদ বলেন, ‘ইন্টার্নশিপে জয়েন করার পর থেকে ঢাবির/বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আসতে দেখছি। তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। স্যারদের কাছেও রোগীর কোন দরকারে গেলে বলছি স্যার রোগী ঢাবির স্টুডেন্ট। পাশের ক্যাম্পাস, নিজেদের লোক ভেবেই এইটা করতাম। আজকে এ রকম প্রতিদান পেলাম।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা আজ মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বলেন, ‘আজ বন্ধের দিন হওয়ায় কিছুক্ষণ আগে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মহোদয়ের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমাদের একজন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসক, যারা মূলত হাসপাতালের মূল কাজটা সম্পাদন করেন। তাঁর ওপর অতর্কিতে হামলা হওয়ায় আমরা বিব্রত বোধ করছি। এটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য না। কাজ শেষে একজন বিশ্রাম নিচ্ছেন, এটা আবার ঢাকা মেডিকেলের একেবারেই লাগোয়া চত্বরে, যেখানে সব সময় আমাদের চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের আনাগোনা আছে। সেখানে যারা এ রকম আক্রমণ করলো, আমরা তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা ইন্টার্নদের সঙ্গে আলোচনা করবো, তারা হয় তো প্রতিবাদ কর্মসূচি যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে বলবো, রোগীদের সেবা যেন ব্যাহত না হয় এবং এর মাধ্যমে যেন উপযুক্ত সমাধান নিশ্চিত হয়। হামলাকারীদের যেন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করবো। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতৃবৃন্দ মিলেই একটি সিদ্ধান্ত নেবো, যাতে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা না ঘটে।’
হামলাকারীরা ঢাবির শিক্ষার্থী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করবো।’
Discussion about this post