হার্টবিট ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শ্রবণ সহায়ক ব্যয়বহুল কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের বরাদ্দপত্র বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। রোববার (৭ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ব্লক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল ডিভাইসের বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পরিচালিত এ কর্মসূচির আওতায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক শিশু স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পেয়েছে। এসব শিশু কানে শুনতো না এবং কথাও বলতে পারতো না। তারা এখন কানে শুনতে পারছে, কথা বলতে পারছে। সমাজ ও পরিবারের বোঝা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে এসব শিশুরা। এমনকি যে মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানের মুখে কোনোদিন মা-বাবা ডাক শুনতে পায়নি, তারা তাদের জীবনে মা-বাবা ডাক শুনতে পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোট ৬ শত ২৫ জন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ শত ৫ জনই শিশু, বাকিরা বিভিন্ন বয়সের।
আরও জানানো হয়, এই চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন জটিল তেমন ব্যয়বহুল। শুধু মাত্র কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইসের দাম হল ৬ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা। ২০১০ সালে এই কর্মসূচি চালুর সময় ডিভাইসসহ চিকিৎসার ব্যয় ছিল প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
তবে বিএসএমএমইউতে অটোল্যারিংগোলজি হেড নেক সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ, অডিওলজিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টসহ সুদক্ষ টিম বর্তমান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি দিয়ে আসছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এমনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলছে, যাতে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেওয়া সম্ভব হয় এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়।
এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম বিএসএমএমইউর কর্মসূচি পরিচালক ও অটোল্যারিংগোলজি-হেড এন্ড নেক সার্জারি বিভাগের অটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম জহুরুল হক সাচ্চু।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বা বায়োনিক ইয়ার হলো শ্রবণ সহায়ক অত্যাধুনিক অত্যন্ত ব্যয়বহুল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। প্রতিটি রোগীর কানে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট স্থাপনে শুধু ডিভাইসের জন্যই ব্যয় হয় ৬ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা। এই ইমপ্লান্টটি কানের জটিল অপারেশনের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে দক্ষ অডিওলজিস্ট ও স্পিচ থেরাপিস্টের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ২০১০ সালে বিএসএমএমইউতে ‘ডেভলপমেন্ট অব কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রোগ্রাম ইন বিএসএমএমইউ’ কর্মসূচি চালু হয়। কর্মসূচি পরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হকের তত্ত্বাবধানে অটোল্যারিংগোলজি-হেড এন্ড নেক সার্জারি বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে এ কার্যক্রম।
এখানে ২০১১ সালে প্রথম রোগীর কানে সফলতার সঙ্গে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই চিকিৎসার কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী।
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বরাদ্দ নীতিমালার আলোকে বরাদ্দপত্র প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচিত রোগীদের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইসটি প্রাপ্তির ব্যাপারে সনদ প্রদান করা হয়। এই ইমপ্লান্ট প্রোগ্রামটি কোভিডকালীন সময়ে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয় এবং এ সময়ে ৬ মাসে প্রায় ১০০টি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়।
বর্তমানে এই কার্যক্রম থেকে চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হকের নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে ছয় জনের একটি টিম নিয়মিত কাজ করছেন। অন্যরা হলেন অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বিশ্বাস ও সহকারী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশীদ তালুকদার। এখানে দক্ষ স্পিচ থেরাপিস্ট, অডিওলজিস্ট এবং সার্জনের সমন্বয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জটিল এই চিকিৎসা সহজেই করা সম্ভব হচ্ছে।
Discussion about this post