হার্টবিট ডেস্ক
বছরে মাত্র ৯ ডলার খরচ করেই দেশব্যাপী একজন মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ, যা প্রতিরোধযোগ্য।ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভস’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) প্রোগ্রাম, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস।
বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ পরিচালনায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এরই মধ্যে দেশের ৫১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এই কর্মসূচির আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘হার্টস টেকনিক্যাল প্যাকেজ’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ সেবা দেওয়া হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১ লাখ রোগীর মধ্যে ৫৮ শতাংশই উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে রিজলভ টু সেভ লাইভসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রাক্তন পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন বলেন, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপজনিত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হলে অসংখ্য জীবন বাঁচানোসহ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ত্রিশ শতাংশই ঘটে হৃদরোগের কারণে। অথচ স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয় অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য। দেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পাইলট প্রোগ্রামটির মাধ্যমে দেখা গেছে, কিভাবে অল্প খরচে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশব্যাপী এমনকি জাতীয় পর্যায়েও উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা সম্ভব।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিটি ইতোমধ্যে টাস্ক-শেয়ারিং এবং টিমভিত্তিক সেবা প্রদানের নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করে সফলতার মুখ দেখছে।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, সাধারণ ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৪৯ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিত্সা সেবা নিয়েছেন এবং ১৪ শতাংশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বার্ষিক বাস্তবায়ন খরচ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হার্টস কস্টিং টুল নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এই গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, ডাক্তার এবং এই সেবার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি (টাস্ক-শেয়ারিং) নিশ্চিত করা, টাস্ক-শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ায় স্থানীয় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা এবং গুণগত মান ঠিক রেখে প্রতি ইউনিট ওষুধের দাম আরও কমিয়ে আনা গেলে হার্টস প্যাকেজ বাস্তবায়ন সাশ্রয়ী হবে।
Discussion about this post