মো. ইকবাল হোসেন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। তবে কাঁচা বা আধা সেদ্ধ শাক খাওয়া যাবে না।
ঋতুর ভিন্নতায় আমাদের দেশে খাদ্যে বৈচিত্র্য আসে। আমাদের এই দেশে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে আমরা ভিন্ন ভিন্ন শাকসবজি পেয়ে থাকি। খাদ্য বৈচিত্র্য আমাদের শরীরকে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরও শক্তিশালী করে।
এজন্য সব ধরনের খাবারের পাশাপাশি বর্ষায় প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায়। এ সময়ে পটোল, ঢ্যাঁড়স, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, সবুজ শাকসহ আরও অনেক শাকসবজিতে বাজার ভরপুর থাকে। এসব শাকসবজি আমাদের শরীরের সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ করে।
বর্ষাকালে এমনিতেই পানিবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় শাকসবজিবাহিত কিছু সমস্যা। বর্ষাকালের আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে হওয়ার কারণে শাকসবজির মাধ্যমে, বিশেষ করে শাকের মাধ্যমে কিছু রোগ ছড়াতে পারে।
কী সমস্যা হতে পারে
বর্ষাকালে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর আধিক্য বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ সময় কিছু বিষাক্ত পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এসব পোকামাকড় শাকের কাণ্ড ও পাতায় বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে; বিশেষ করে যেসব শাকের গাছ মাটির খুব কাছাকাছি অবস্থান করে সেই সব শাকে এমন সমস্যা হতে পারে। যেমন লালশাক, মাচা ছাড়া পুঁইশাক, কলমিশাক, বর্ষাকালীন পালংশাক, পাতাকপি ইত্যাদি। এ অবস্থায় এগুলো খেলে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। হতে পারে ডায়রিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা।
পুঁইশাকের পাতা সারকোস্পোরা বেটিকোলা নামক ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানি দিয়ে এর বিস্তার দ্রুত ঘটে থাকে। এমন আক্রান্ত পাতাযুক্ত পুঁইশাক খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া পুঁইশাকের কাণ্ডপচা রোগও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়।
কলমিশাক ও লালশাকের ছত্রাকজনিত পাতার দাগ রোগ বর্ষাকালে বেশি হয়। এসব রোগের কারণে শাকগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।
বর্ষাকালীন পাতাকপি হতে পারে আরও বিপজ্জনক। এর প্রতিটি পাতার ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টির পানি জমে যেতে পারে। ফলে সেখানে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ আরও অনেক ছোট ছোট পোকামাকড় বংশ বিস্তার করতে পারে। ফলে এগুলো খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।
ডাঁটাশাকের পাতা কিছুটা নিরাপদ হলেও এর কাণ্ডপচা রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
তাহলে কি বর্ষায় শাক খাবেন না
অবশ্যই বর্ষায় শাক খাবেন। সে ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন
- শাক কেনার সময় দাগহীন পাতাযুক্ত শাক কিনতে হবে।
- প্রয়োজনে নিজেদের ছাদবাগান বা বাড়ির উঠানে শাকের চাষ করে ভালোমতো পরিচর্যা করতে হবে।
- কিছু আক্রান্ত পাতা থাকতেই পারে। সেগুলো বেছে ফেলে দিতে হবে।
- উঁচু ঢালু জমিতে শাক চাষ করতে হবে।
- রান্নার আগে লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে শাক ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
তবে অনেকেই আছেন, যাঁরা বর্ষায় একেবারেই শাক খেতে চান না। তাঁরা শাকের পরিবর্তে সবজি খাবেন, ফলমূল খাবেন। আমরা শাক খেয়ে থাকি শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে। সে ক্ষেত্রে সবজিতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল আছে। তাই শাকের পরিবর্তে বেশি বেশি সবজি খান। শাকে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যেটা সবজিতে থাকে না। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে শাক খাওয়াই ভালো।
লেখক: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
Discussion about this post