ডা. দিদারুল আহসান
কিছু রোগ মানুষের জীবননাশ করে না- তবে মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। যেমন শ্বেতি রোগ। অনেক মহিলা এবং পুরুষের কাছে শ্বেতি রোগের সাদা দাগ শারীরিক কষ্টের চেয়েও বেশি। যদিও এ রোগ ছোঁয়াচে নয়।
তারপরও অনেকেই ভাবে শ্বেতি রোগীর কাছে গেলে তারও এ রোগ হতে পারে।
শ্বেতির কারণ
* বংশগত
* অটো ইমিউন বা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত অসুখ: এতে ত্বকে থাকা মেলানোসাইট ধ্বংস হয়, ত্বক সাদা হয়ে যায়।
* সেগমেন্টাল ভিটিলিগো: কোনো নার্ভ বা স্নায়ু যে স্থান থেকে সংবেদন বহন করে ওই স্থান জুড়ে এ ধরনের শ্বেতি দেখা যায়।
* কেমিক্যাল বা কন্ট্যাক্ট লিউকোডার্মা: কিছু কিছু কেমিক্যাল যেমন- মনোইথাইলিন বেনজিন, হাইড্রোকুইস ইত্যাদির সংস্পর্শে গেলে কারও কারও শ্বেতি রোগ হয়।
* জন্মগত: প্রি-ব্যালডিজম নামে এক ধরনের শ্বেতি জন্মগতভাবেও দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
* শরীরের যেকোনো স্থানে, বিশেষ করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে প্রায়ই আসে এমন স্থান, যেমন- মুখ, হাত, পা ইত্যাদি অংশ ত্বকের স্বাভাবিক রং হারিয়ে ক্রমে সাদা দুধের মতো হয়ে যায়। রোদের আলোয় গেলে শ্বেতি আক্রান্ত অংশ লাল হয়ে যেতে পারে। এমনকি শ্বেতি আক্রান্ত অংশের লোম ও চুলও সাদা হয়ে যায়।
চিকিৎসা
* প্রচলিত পদ্ধতি: স্টেরয়েড মলম লাগানো এবং স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবন। সোরালিন মলম লাগিয়ে অথবা ট্যাবলেট সেবন করে রোদে দাঁড়িয়ে থাকা।
* পুভা থেরাপি: প্রায় ৫০ অথবা তার চেয়ে বেশি বার পুভা মেশিনের সাহায্যে থেরাপি (সপ্তাহে কমপক্ষে দুটি সেশন, প্রতি সেশন ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী) নিলে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ শ্বেতি রোগী ভালো হয়।
* ন্যারো ব্যান্ড ইউভিবি থেরাপি: এটি পুভা থেরাপিরই আধুনিক সংস্করণ। এতে কম সেশন লাগে এবং ভালো ফল পাওয়া যায়।
* ফটোডায়নামিক থেরাপি: লেজারের মাধ্যমে এটি প্রয়োগ করা হয়। শ্বেতি রোগে ত্বকের ‘ক্যাটালেজ’ নামের একটি কেমিক্যাল কমে যায়। এই থেরাপিতে সুডো ক্যাটালেজ ওষুধ দিয়ে ত্বকে ক্যাটালেজের পরিমাণ বাড়ানো হয়।এতে ত্বকে আবার মেলানিন তৈরি হয় এবং শ্বেতি আবার স্বাভাবিক হয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন রেড এলইডি লেজারের। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’দিন আধাঘণ্টা করে কমপক্ষে তিন-চার মাস চিকিৎসা দিতে হয়।
* অটোলোগাস মেলানোসাইট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন: এ পদ্ধতিতে শরীরের যেকোনো স্থান (যেখানে ত্বক স্বাভাবিক) থেকে অল্প একটু চামড়া নিয়ে সেখান থেকে মেলানোসাইট আলাদা করা হয়। সেই মেলানোসাইটকে বিশেষ পদ্ধতিতে কৃত্রিম উপায়ে কালচার করে শ্বেতির সাদা জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়।
লেখক: চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার: আলরাজী হাসপাতাল, ১২ ফার্মগেট, ঢাকা।
Discussion about this post