অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম
হঠাৎ করেই পেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
যেখানে ফুটো হয়
পাকস্থলী (স্টমাক), ডিওডিনাম, ক্ষুদ অন্ত্রের জেজুনাম বা আইলিয়াম-এ (৪) বৃহদন্ত্রের সিকাম, কোলন ও রেকটাম-এ (৫) ইসোফেগাসে অর্থাৎ পরিপাকতন্ত্রের যেকোনো অংশে পারফোরেশন হতে পারে।
পাকস্থলীর পারফোরেশনের (খাদ্যনালী) ফুটোর কারণ সমূহ:
(১) খাদ্যনালীর বা পাকস্থলীর পারফোরেশন খুবই কমন একটি সমস্যা। যেমনÑ গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডিওডিনাল আলসার পারফোরেশন।
(২) টাইফয়েড আলসার পারফোরেশন ক্ষুদ্র অন্ত্রের আইলিয়াম এ টাইফয়েড জ্বরের পর হতে পারে।
(৩) খাদ্যনালীর টিবি, টিউমার বা ক্যান্সারেও পারফোরেশন হতে পারে।
(৪) আঘাতজনিত বা ট্রমার কারণেও পারফোরেশন হতে পারে। যেমনÑ এন্ডোসকপি করার সময় এবং রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
(৫) বাত, শরীর ব্যথা ও পেট ব্যথা ইত্যাদির জন্য খালি পেটে ব্যথানাশক ওষুধ (ঘঝঅওউ ক্লোফেনাক) ব্যবহার করলেও খাদ্যনালীর পারফোরেশন হতে পারে।
ফুটো হওয়ার লক্ষণগুলো
পেটে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা, ব্যথা ছড়িয়ে পড়া ও পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, এ ধরনের অসুখ হলে নড়াচড়া, হাঁচি, কাশিতেও পেটে অনেক ব্যথা হয়। অনেক সময় রোগীর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় ও রোগী একবারে স্থিরভাবে বিছানায় শুয়ে থাকে, পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও পেট ফেঁপে যাওয়া বা বমি হওয়া। এছাড়া রোগীর টাইফয়েড, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ব্যথানাশক ওষুধ আঘাত ইত্যাদির ইতিহাস থাকা।
যেভাবে এই রোগ হয়েছে কিনা বুঝা যায়:
রোগীকে দাঁড়ানো অবস্থায় পেট ও বুকের এক্স-রে করলে উপরের পেটে ফ্রি গ্যাস দেখে এই রোগ কনফার্ম করা যাবে।
খাদ্যনালী ফুটো হলে করণীয়
অপারেশনই হচ্ছে এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। অপারেশনের মাধ্যমে খাদ্যনালীর ফুটো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং পরিপাকে বা পেটে জমে থাকা এসিড, খাদ্য, পানি, মল ওয়াশ করতে হবে, রোগীকে মুখে কিছু খাওয়ানো যাবে না, জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। নাক দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে স্টমাক ওয়াশ করতে হবে। স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে।
অপারেশন না করলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে
(১) খাদ্যনালীর ফুটো দিয়ে বের হয়ে আসা খাবার এনজাইম এসিড মল ইত্যাদি পেটে জমা হয়ে ইনফেকশন এবং এবসেস ইত্যাদি হতে পারে।
(২) এমনকি সেপটিক শকে রোগী মারাও যেতে পারে।
তাই এই রোগটি হলে বিলম্ব না করে জরুরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক: (অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম),বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, রক্ত ও খাদ্যনালী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সাবেক), জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মহাখালী-ঢাকা।
কনসালটেন্ট-ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান,ঢাকা।
চেম্বার– ফরাজী হাসপাতাল, বনশ্রী রামপুরা, ঢাকা।
Discussion about this post