ডা. দিদারুল আহসান
কেন শরীর চুলকায় এ নিয়ে এখনো গবেষণা চলমান। কারণগুলোকে কয়েকভাগে ভাগ করা গেলেও কি মেকানিজমে যে আসলে শরীর চুলকায় তা পুরোপুরি এখনো বোঝা যায়নি।
চর্মরোগের কারণেই শরীর চুলকাবে এমনটা নয়।
কিছু সিস্টেমিক ডিজিস আছে যেগুলোর জন্য শরীর চুলকায়। কিন্তু শরীরে কোনো ফোট, গোটা বা রিস্ক হয় না। এ টাইপের রোগ বা অসুখগুলো চুলকানির সেকেন্ডারি কারণ (secondary to systemic disease)।
* লিভারের রোগে শরীর চুলকায় (Obstructive Jaundice)
* কিডনির রোগে শরীর চুলকায় (Chronic Kidney Disease)
* ডায়াবেটিসে ইনফেকশনের রিস্ক এত বাড়ে যে শরীর চুলকায়। ডায়াবেটিস থাকার ফলে যদি ছত্রাক আক্রমণ হয় তবে কিন্তু রিস্ক থাকবে।
* থাইরয়েড হরমোন ইমব্যালান্স হলে শরীর চুলকায়। যাদের হাইপারথাইরয়েড তাদের অতিরিক্ত গা ঘামার পর শরীর চুলকায়।
* রক্তস্বল্পতায় (Iron deficiency anaemia) শরীর চুলকায়।
* শরীরে লোহিত রক্তকণিকা (RBC) বেড়ে গেলে চুলকায়। সাধারণত চড়ষুপুঃযবসরধ ৎঁনৎধ াবৎধ- তে শরীর চুলকায়। এদের গোসল করার পর চুলকানি শুরু হয়।
* রক্তের ক্যান্সার- যেমন লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া, মায়োলোমাতে অজানা কারণে শরীর চুলকায়।
* HIV-তে শরীর চুলকায়।
এ চুলকানিগুলো চামড়ার কোনো রোগে না বরং অন্য রোগের কারণে শরীর চুলকায়।
তাই চুলকানি নিয়ে অবহেলা আর নয়।
স্কিনের নিজস্ব কারণে চুলকানি হলে সেটা প্রাইমারি কারণ সারা গায়ে চুলকায়।
* খোস-পাঁচড়া
* আর্টিকেরিয়া
* বয়স্কদের ত্বকের শুষ্কজনিত চুলকানি
* সোরিয়াসিস
আক্রান্ত স্থানে চুলকায়
* ছত্রাক সংক্রমণ
* উকুন
* লাইকেন প্লানাস
সারা গায়ে বা শুধু নির্দিষ্ট স্থানে চুলকায়
* অ্যাকজিমা
এ রোগগুলো স্কিনের এবং এগুলোর কারণে গায়ে চুলকানি হয়।
* মানসিক অস্থিরতা বা উদ্বেগের কারণেও চুলকানি হতে পারে।
স্কিনের নিজস্ব কারণে না বা অন্য কোনো রোগের জন্যও যখন শরীর চুলকায় না তখন সেটা সাইকোজেনিক। তবে এটা তখনই কেবল নির্ণয় করা সম্ভব যখন ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে যে চুলকানির পেছনে কোনো অর্গানিক কারণ নেই।
সব রকম চুলকানি যেমন চর্মরোগ নয় আবার নানা রকম চর্মরোগে চুলকায়। এক এক রোগের চিকিৎসা এক এক রকম।তাই চুলকানিকে যতই ছোট মনে করি আসলে এটা এত ছোট কিছু নয়।
চিকিৎসা
যেকোনো ধরনের চুলকানিতেই চিকিৎসকের পরামর্শে ময়েশ্চারাইজার ও কম ক্ষারযুক্ত সাবান সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করা যায়। শরীরে নারিকেল তেল লাগাতে পারেন। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, সোরিয়াসিস থাকলে তা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। সূর্যরশ্মি, চুলার ও গাড়ির ধোঁয়া থেকে দূরে থাকবেন। নখ দিয়ে ত্বক চুলকাবেন না।
লেখক: ত্বক ও যৌন ব্যাধি বিশেষজ্ঞ, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।
Discussion about this post