অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু সালেহ আলমগীর
দৈনন্দিন জীবনযাপনের তাগিদে ও জীবিকার সন্ধানে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নড়াচড়া করতে হয়। দিন–রাতে বহুবার বিভিন্নভাবে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করতে হয়। এগুলো আমাদের মেরুদণ্ডে নানা মাত্রার চাপ তৈরি করে। চাপ নিতে ভুল হওয়ার কারণে অনেক সময় আমরা ব্যাক পেইনে (পিঠ-কোমরের ব্যথা) আক্রান্ত হই।
কখন, কী রকমের চাপ পড়ে
যখন আমরা চিত হয়ে শুয়ে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে কম চাপ পড়ে। এর পরিমাণ ২৫ কেজি। আমরা যদি কাত হয়ে শুই, তখন মেরুদণ্ডে চাপের পরিমাণ হয় ৭৫ কেজি। যখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে ১০০ কেজি। যদি সোজা হয়ে দাঁড়াই ও সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন এ চাপের পরিমাণ ১৫০ কেজি। তবে যখন কোনো বস্তু সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় তোলার চেষ্টা করি, তখন চাপের পরিমাণ ২২০ কেজিতে পৌঁছায়।
চেয়ারে সোজা হয়ে বসে থাকার সময় মেরুদণ্ডে চাপের পরিমাণ ১৪০ কেজি। আবার চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকলে মেরুদণ্ডে ১৮৫ কেজি চাপ পড়ে। আমাদের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে, যখন চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সামনে ঝুঁকে ২০ কেজি ওজনের কোনো বস্তু হাত দিয়ে টেনে তুলি। তখন মেরুদণ্ডে চাপের পরিমাণ হয় ২৭৫ কেজি।
চাপ কমানোর উপায়
● যদি কোনো বস্তু অনেক ভারী হয়, তবে তা তুলতে আরও এক-দুজনের সাহায্য নেবেন। এতে ওজনটা ভাগ হয়ে যাবে। কোনো বস্তু তোলার সময় পা দুটি যথেষ্ট ফাঁকা করে নেবেন, এতে সাপোর্ট বাড়ে।
● তুলতে যাওয়া বস্তুটির যথাসম্ভব কাছাকাছি যাবেন, বসে বা দাঁড়িয়ে যেভাবেই হোক, দূরের কোনো বস্তু তুলতে যাবেন না। আমরা অনেক সময় তা–ই করি। যেমন অফিসে হাত থেকে কলম বা কাগজ পড়ে গেল, বসে থেকেই শরীর বাঁকিয়ে দূর থেকে তোলার চেষ্টা করি। তা না করে উঠে গিয়ে কাছাকাছি গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তুলুন।
● কোনো কিছু তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করবেন, পিঠ নয়। বস্তু তোলার সময় পেটের পেশি শক্ত করে নেবেন। যখন জিনিসটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াবেন তখন মেরুদণ্ড বা পিঠ বাঁকা করবেন না, সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবেন।
●তোলা বা বহন করার সময় মেরুদণ্ড টুইস্ট করে (কোমর থেকে ওপরের অংশ মোচড় দেওয়া) এদিক-ওদিক তাকাবেন না।
বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিওথেরাপি মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন, আমেরিকা বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মালিবাগ মোড়, ঢাকা
Discussion about this post