ডা: মাহ্ফুজুল কাদের, এমবিবিএস, এমএস (নিউরোসার্জারী) , ব্রেইন,স্পাইন বিশেষজ্ঞ ও সার্জন , সহকারী অধ্যাপক, নিউরোসার্জারী বিভাগ, চ.মে.ক. হাসপাতাল ।
সাধারণত মস্তিষ্কের টিউমারকেই ব্রেন টিউমার বলা হয়। যেকোনো বয়সেই ব্রেন টিউমার হতে পারে। কিছু টিউমারের সূত্রপাত মস্তিষ্কেই। এদের বলে প্রাইমারি ব্রেন টিউমার।
টেনটোরিয়াম নামক একটি পর্দা দিয়ে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক দুটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত—ওপরের প্রকোষ্ঠ ও নিচের প্রকোষ্ঠ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওপরের প্রকোষ্ঠে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ টিউমার হতে পারে এবং নিচেরটিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আর শিশুদের ক্ষেত্রে ওপরের প্রকোষ্ঠে ৪০ শতাংশ এবং নিচেরটিতে ৬০ শতাংশ টিউমার হতে পারে।
ব্রেইন টিউমার থেকেই সাধারণত ব্রেইন ক্যানসারের সৃষ্টি হয়। যথাসময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করা গেলে এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে দেশেই চিকিৎসা নিয়ে এই রোগ থেকে সহজে সেরে ওঠা সম্ভব।
ব্রেন টিউমার প্রধানত দুই ধরনের।
১. বেনাইন টিউমার, যা ক্যানসার নয় এবং
২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যানসার–জাতীয় টিউমার।
ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসার–জাতীয় টিউমার আবার দুই ধরনের।
১. প্রাথমিক ম্যালিগন্যান্ট, যা মস্তিষ্কের মধ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে থাকে।
২. মেটাস্টেটিক, যা শরীরের অন্য জায়গায় উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রেন টিউমার যে কারণে হয়:
ব্রেন টিউমার বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ব্রেন টিউমার তখনি হয় যখন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কোষগুলির ডিএনএ-তে কোনো ত্রুটি থাকে। শরীরের কোষগুলো ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে যায় এবং মরে যায়। যার পরিবর্তে অন্য কোষ সৃষ্টি হয়।ডিএনএ-তে ত্রুটির কারণে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে থাকে যার ফলশ্রুতিতে টিউমারের সৃষ্টি হয়।আবার অনেক সময় বংশগত কারণে ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাবা, মা বা আত্মীয় কারো ব্রেন টিউমার থাকলে।আবার রেডিয়েশন যেমন: এক্স-রে,অতিবেগুনী রশ্মি, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদির জন্যও টিউমার হয়ে থাকে।
ব্রেন টিউমারের লক্ষণসমূহ:
- ব্রেন টিউমারের লক্ষণ নানা ধরণের। প্রধান বা স্বাভাবিক লক্ষণ মাথাব্যথা। এই মাথাব্যথা রোগীর কর্মকাণ্ডের সাথে তীব্র হয়। অর্থাৎ রোগী বিশ্রামে থাকলে মাথাব্যথা কম থাকে। আর কোন কাজ করলে তীব্রতা বাড়ে। অনেক সময় ভোরে মাথাব্যথাটা বেশি হয়।
- পাশাপাশি রোগীর বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে যাওয়াকে আমরা সব টিউমারের ক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে ধরতে পারি।
- এ ছাড়াও অনেক সময় রোগীর অন্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে। রোগীর খিঁচুনি হতে পারে অথবা শরীরের যেকোনো একদিকের হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হয়ে যেতে পারে। আবার তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে অর্থাৎ তার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেবে।
ব্রেন টিউমার নির্ণয় :
ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে যথাসম্ভব দ্রুত নিউরোমেডিসিন বা নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রোগ নির্ণয়ে নিচের পরীক্ষাগুলো সহায়ক:
১. ব্রেনের সিটিস্ক্যান ও এমআরআই
২.স্টেরিওটেক্টিক ব্রেন বায়োপসি দ্বারা টিউমারের ধরণ জানা যায়।
৩. এমআরএস এর মাধ্যমে ব্রেনের অন্য রোগ থেকে টিউমারকে আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায়।
ব্রেন টিউমার চিকিৎসা :
- ব্রেন টিউমার চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের আকার, অবস্থান এবং ধরনের ওপর। যেমন, ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমারের সাধারণ চিকিৎসা হলো সার্জারি। এটি ব্রেনের কোনো অংশ ক্ষতি না করে ক্যান্সার অপসারণে সহায়তা করে।
- কিছু টিউমার এমন জায়গায় থাকে যেগুলো অপসারণ করা সহজ আবার কিছু এমন জায়গায় অবস্থান করে যেগুলো সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। সার্জারিতে কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন ইনফেকশন এবং রক্তক্ষরণ। বিনাইন টিউমার অস্ত্রোপচার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়।
- ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা বেশ জটিল। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। খিঁচুনি, বমির মতো লক্ষণ দেখে এগুলো বন্ধে ওষুধ দেয়া হয়।
- কিছুদিন আগেও মানুষ মনে করতো ব্রেইন টিউমারের কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু এখন যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে দেশেই চিকিৎসা হয়।এজন্য ব্রেইন টিউমার হলে বা লক্ষণগুলো দেখা দিলে খুব দ্রুতই চিহ্নিত করতে হবে। দ্রুত শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা দিলে ব্রেইন টিউমার খুব সহজেই ভালো হয়।
চেম্বার: ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। ফোন: ০১৮৮৬-৬১০১১৫, ০১৮৮৬-৬১০১১৬
Discussion about this post