হার্টবিট ডেস্ক
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। ছিল উন্নত যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসকের অভাব। তবে সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। বর্তমানে দেশে হৃদরোগ চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
একইসঙ্গে বিশ্বের সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসাবিষয়ক জ্ঞানের আদান-প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞানের আরও প্রসার ঘটিয়ে দেশে হৃদরোগের চিকিৎসাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা তাদের। শুক্রবার (২৪ জুন) রাতে রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব কার্ডিওভাস্কুলার ইন্টারভেনশন (বিএসসিআই) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সায়েন্টিফিক কনফারেন্সে তারা এ আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম এ মালেক। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর শূন্য হাতে আমরা চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছিলাম। তখন আমাদের কিছুই ছিল না। দেশে কার্ডিওলজিস্ট ছিল না। কার্ডিওলজির সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ছিল না। আজ সে চিত্র বদলে গেছে। এখন আমরা কার্ডিওলজি চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছি।
দেশে হৃদরোগ চিকিৎসার এ কাণ্ডারি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী। পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে তারা এ খাতে অনেক ভালো করবে। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অনেক নতুন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় তা এখনও কম। আমাদের আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। তাদের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রোগের জন্য একাধিক ইনস্টিটিউট করেছেন, যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হয়েছে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির সুযোগ হয়েছে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরিতে সুযোগ বৃদ্ধি করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ফ্যাকাল্টি আছে, সেখানে ছাত্রসংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেব। তারা যদি আবেদন করে তাহলে সিট সংখ্যা বাড়িয়ে দেব। অনেকে এমডি-এমএস কোর্স তিন বছরের করার কথা বলছেন। আমরা সে দিকে যাব না। বর্তমান পদ্ধতির আওতায় আমরা পাঁচ বছরে সুপার স্পেশালিস্ট তৈরি করছি, তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া কোর্স সম্পন্নের পর আমরা এক বছরের একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালুর কথা ভাবছি।
তরুণ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে অধ্যাপক ডা. হাসিনা বানু বলেন, আমাদের সময় ১০ থেকে ১২ জন কার্ডিওলজিস্ট ছিল। এখন ৪০০ জনের বেশি কার্ডিওলজিস্ট এ প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন। আমাদের সময় মাত্র কয়েকটি ইসিজি মেশিন ছিল, আর এখন অলি-গলির হাসপাতালগুলোতেও তা রয়েছে। অর্থাৎ আপনাদের জন্য কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। এটিকে কাজে লাগাতে হবে।
কনফারেন্সে দেশ-বিদেশ থেকে আসা কার্ডিওলজিস্টরা অংশ নেন। এ সময় একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয় এবং দেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রাখা কিংবদন্তি চিকিৎসকদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
Discussion about this post